চলছে মধু মাস। বাজারে আসতে শুরু করেছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা রসালো ফল। এসব ফল অনলাইনে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসব মৌসুমী ফল এসে থাকে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রসালো ফলের মধ্যে আম, লিচু এবং কাঁঠাল সারাদেশের বাজারে আসতে শুরু করেছে। অনলাইনে এসব ফলের চাহিদাও ভালো।
বর্তমানে অনলাইনে বেচা-কেনা বেড়েছে। তাই আম ব্যবসায়ীরা এখন এ প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে ই-কমার্স পোর্টাল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো এবং ফোন কলের মতো একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
স্থানীয় বাজার এবং সুপার শপ উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি কয়েক হাজার তরুণ এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এ তরুণদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বেকার। বছরে মে থেকে আগস্ট অর্থাৎ তিন থেকে চার মাস ধরে চলে আমের ব্যবসা।
সারাদেশের মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুরের আম আগে পাকে। এখন এসব আম সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে।
অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরার হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ, রাজশাহীর রাজভোগ ও গোপালভোগ এরই মধ্যে বাজারে এসেছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরশাপাত ও ল্যাংড়া আমও মিলছে তবে খুব কম।
আরও কিছু জনপ্রিয় আমের মধ্যে রয়েছে ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, হিমসাগর, আম্রপালি, আশ্বিনা, গোপালভোগ, খিরমন ইত্যাদি। এসব আম আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাসানুজ্জামান বলেন, “মৌসুমের শুরুতেই আম খেতে ভালোবাসি। আমি এমন কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চিনি যারা মৌসুমে রাজশাহীর আমের ব্যবসা করেন। মান ভালো ও ফরমালিনমুক্ত আম পেতে পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।”
চাহিদার ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবিলা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনলাইন ব্যবসায়ীরা।
একইসাথে তারা অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছেন, বিভিন্ন বাগান থেকে আম সংগ্রহ করছেন। আম যত্ন সহকারে প্যাক করে তাৎক্ষণিকভাবে বাস, ট্রাক বা ব্যক্তিগত যানবাহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান জানান, স্নাতক শেষ করে গত চার বছর ধরে রাজশাহীতে তার বন্ধুর সঙ্গে আমের ব্যবসা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, “প্রায় এক মাস আগ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ই-বাগান নামে পেজ থেকে ফেসবুক লাইভ করে বাগানের আমের পরিস্থিতি আপডেট দেয়া শুরু করি। ক্রেতারা সম্প্রতি অর্ডার দেয়া শুরু করেছে। আমরা ২৩মে গোপালভোগ জাতের আম ডেলিভারি শুরু করেছি। প্রতি কেজি আম ঢাকায় ১১০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১১৫ টাকা।”
হাফিজ জানান, একদিনে ১৫-২০ মণ আম রাজধানীতে পাঠাতে পারেন তারা। আগামী তিন মাসে ৪০০-৫০০ মণ আম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
ফজলি ডটকমের মালিক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক আবদুল্লাহ বলেন, রাজশাহীর আগে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম পাকে। তাই এ আমের অর্ডার ও ডেলিভারি শুরু করেছি।
তিনি বলেন, “আমরা ঢাকার ৫২টি স্থানে আমাদের নিজস্ব পরিবহনে নগদ-অন ডেলিভারির ভিত্তিতে আম সরবরাহ করছি। পাশাপাশি ৬২টি জেলা থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের জন্য অনলাইন অর্ডার নিচ্ছি এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ করছি”।
তিনি আরও বলেন, "ফজলি ডটকম তার যাত্রার ১০ বছর উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে আম কেনার পরিমাণ উপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের ছাড় দেয়া হচ্ছে"।
আশিক আবদুল্লাহ বলেন, আমরা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন ফজলি ডট কম, রাজশাহীম্যাঙ্গো ডট কম, আমবাজার ডট কম, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ, গ্রুপ, ইউটিউব চ্যানেল এবং নিজস্ব মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সর্বাধিক সংখ্যক গ্রাহকদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
আগের বছরের তুলনায় এ বছর আমের ফলন কম। রসালো এ জনপ্রিয় ফলের বিক্রি সবে শুরু হয়েছে তাই দাম তুলনামূলক বেশি বলে আশিক জানান, চলতি মৌসুমে দেশে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টন আম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে এক মাসের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম পরিপক্ব হয়ে বাজারে আসবে বলে জানান তিনি।
আশিক আবদুল্লাহ বলেন, আমের সব অনলাইন বিক্রেতার কিছু নিজস্ব গ্রাহক রয়েছে এবং তাদের জন্য বিশেষ প্যাকেজিং, ছাড় এবং সম্ভাব্য সর্বোত্তম পরিষেবা দেয়া হয় যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় ডিল হয়।
বিক্রেতারা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আমের দাম জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে কমে কারণ সে সময় বেশিরভাগ আম পেকে যায়।