প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

আগামী বাজেটে ভ্যাট দায় থেকে মুক্ত হতে পারে ই-কমার্স

হামিমুর রহমান ওয়ালিউল্লাহ
২৪ মে ২০২৩ ১১:১৭:০১ | আপডেট: ২ years আগে
আগামী বাজেটে ভ্যাট দায় থেকে মুক্ত হতে পারে ই-কমার্স

করোনা মহামারির মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। লকডাউনের মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদা মেটতে প্রায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলো এটি। আশা করা হচ্ছে আসন্ন বাজেটে বিক্রয়ের উপর আরোপিত ভ্যাট দায় থেকে মুক্তি পেতে পারে ই-কমার্স।

এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানো এবং খাত সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতা হ্রাস করা।

বাজেট প্রস্তুতির সাথে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অর্থনৈতিক বছর ২৪-এর জাতীয় বাজেটে, সরকার অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং খুচরা ব্যবসার শ্রেণিবিভাগ এবং ডিজিটাল কমার্সের উপর ভ্যাট দায় অপসারণসহ একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া তারা বলছেন, অনলাইন মার্কেটপ্লেস কোম্পানিগুলো তাদের প্রদত্ত সেবার ওপর বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট দেবে এবং পণ্য বা সেবা বিক্রি করলেই ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি করদাতাদের হয়রানি কমিয়ে এ খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। তারা মনে করছেন ডেলিভারি চার্জের উপর ভ্যাট প্রত্যাহার বা এটি ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা প্রয়োজন।

এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস মালিকরা বাজেটে এই বিধান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দাবি জানিয়েছিলেন এবং প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন।

তারা বলছেন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলির জন্য শ্রেণীকরণের অভাব ব্যবসার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। বিদেশি এবং স্থানীয় বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। কারণ তাদের ব্যবসা খুচরা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ কারণে তারা ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস এবং প্রচলিত ব্যবসার মাঝে ভ্যাট বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত গত আড়াই বছরে দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। বর্তমানে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য এ খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)- এর তথ্য অনুসারে, ই-কমার্স বাজারের আকার ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, যা গড়ে বার্ষিক ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশে ২০২১ সালের শেষে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬ হাজার কোটি টাকা ছিলো। ই-ক্যাব ধারনা করছে ২০৩০ সালের শেষ নাগাদ এটি ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে।

প্রধান বাধা

বর্তমানে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো তাদের সাইটের মাধ্যমে বিক্রয় করা প্রতিটি পণ্যের জন্য ভ্যাট নিচ্ছে। যদিও তারা সরাসরি পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করছে না। এনবিআর কর্মকর্তারা কখনও কখনও তাদের গত দুই-তিন বছরের ভ্যাট চালান দেখানোর নির্দেশ দেন।

বর্তমানে প্রচলিত নিয়ম ডিজিটাল ব্যবসার ক্রিয়াকলাপকে বাধাগ্রস্ত করছে। যার ফলে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসগুলিতে বিক্রয়ের তীব্র হার হ্রাস এবং বিনিয়োগ সংকুচিত হচ্ছে। এটি ই-কমার্স খাতের প্রবৃদ্ধিতে বাধা বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বিডিজবস.কম এবং আজকেরডিল.কম উভয়ের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর, দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “বর্তমানে, ভ্যাট বিধানের ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যবসা এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে এ দুই খাতে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।"

“এই ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসগুলি তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করে। তবে তাদের বিক্রয়ের উপর ভ্যাট দায় নিতে হচ্ছে। সরকার যদি বাজেটে এ খাত থেকে ভ্যাট দায় অপসারণ করে তবে এটি ই-কমার্সের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।” 

তিনি যোগ করেন,“ডেলিভারি চার্জের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে, যা ডেলিভারিকে ব্যয়বহুল করে তুলছে এবং গ্রাহকদের আরও চাপের মধ্যে ফেলছে। ঢাকার বাইরে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা রয়েছেন এবং তারা এক হাজার টাকার পণ্য কেনার জন্য ডেলিভারি চার্জ হিসেবে প্রায় ১৫০-২০০ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করছেন।”

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে ভোক্তাদের বোঝা কমাতে, অনলাইনে বিক্রি জনপ্রিয় করতে এবং ডিজিটালাইজেশন বাড়াতে এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত বা অন্তত ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।