আন্তর্জাতিক বাজারে গম ও অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের দাম কমতে থাকায় দেশের বাজারেও কমছে আটা-ময়দা ও ভোজ্য তেলের দাম।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় এসব পণ্যের দাম বেড়েছিল, এখন যুদ্ধ শেষ না হলেও এসব পণ্যের দাম কমে যুদ্ধের আগের অবস্থানের দিকে এগুচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে কমেছে সে হারে দেশের বাজারে কমেনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিনিময় মূল্য বেশি না হলে এসব পণ্যের দাম ইতোমধ্যেই যুদ্ধের আগের অবস্থানে নেমে আসতো।
সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক মাসে আটার দাম কমেছে ১২-২৩ শতাংশ, ময়দার দাম কমেছে ১৩-১৪ শতাংশ ও সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৬-১৩ শতাংশ।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য ডালের দাম চলতি মাসের শুরু পর্যন্ত কম দামে বিক্রি হলেও এখন আবার বেড়েছে। এছাড়া আমদানি নির্ভর আরেক পণ্য চিনিও বাড়তি দামে স্থির রয়েছে। যদিও চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে দাম কমানোর আলোচনা চলছে সরকারের অভ্যন্তরীণ পক্ষগুলোর মধ্যে তবে তা কতটুকু কার্যকর হবে সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে গম রপ্তানির প্রধান দেশ দুটি থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশের সমুদ্র পথে পণ্য আমদানি করতেও নানা জটিলতা তৈরি হয়। এতে গম, চিনি, ডাল, ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের দাম বাড়তে থাকে।
এসব পণ্যের দাম আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধের আগের চেয়েও কমেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে কমেছে সে হারে দেশে না কমলেও উল্লেখযোগ্য হারেই কমেছে।
শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে গমের দাম গত সেপ্টেম্বর থেকে বুশেলপ্রতি ৫ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর এটিই সর্বনিম্ন দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরই ২০২২ সালের মার্চে গমের দাম বেড়ে দাঁড়ায় বুশেল প্রতি ১৩ ডলারে। সেখান থেকে বর্তমানে বাজার দর ১৬০ শতাংশ কমেছে।
টিসিবির তথ্য অনুসারে, রাশিয়া-উইক্রেন যুদ্ধ যখন শুরু হয় দেশে খোলা আটার খুচরা দাম ছিল ৩৫-৩৬ টাকা কেজি। এই দাম যুদ্ধ শুরুর পর কয়েক মাস পর্যন্ত স্থির ছিল। জুলাই-আগস্টের দিকে যুদ্ধের প্রভাবে দাম বাড়তে থাকে। ২০২২ সাল শেষে খুচরা বাজারে খোলা আটার দাম বেড়ে ৫৮-৬০ টাকা। যুদ্ধের প্রভাব শুরুর আগে প্যাকেট আটার দাম ছিল ৪০-৪৫, বছর শেষে তা বেড়ে ৬৫-৭৫ টাকায় দাঁড়ায়।
এছাড়া ময়দার দাম ছিল ৪৬-৫৫ টাকা কেজি, যা ২০২২ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫-৮০ টাকা কেজি।
তবে যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। বর্তমানে খোলা আটার দাম কমে আবার ৪২-৪৫ টাকা কেজিতে নেমেছে। সে হিসেবে যুদ্ধের কারণে দাম বৃদ্ধির পর দাম কমেছে ২৫ শতাংশ।
প্যাকেট আটার দাম নেমেছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজি ও প্যাকেট ময়দার দাম ৬০-৬৫ টাকা কেজি।
এছাড়া সয়াবিন তেলের দামও অনেকাংশে কমেছে, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকা লিটার, যা ঠিক এক বছর আগে ছিল ১৬০-১৭০ টাকা লিটার। তবে যুদ্ধের প্রভাব শুরুর আগে দেশের খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যেত ১৪৫-১৫০ টাকা লিটারে। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও ফিরেছে যুদ্ধের আগের অবস্থান ১৬৫-১৬৮ টাকা লিটারে।
পণ্যের দাম কমতে থাকলেও ডলারের দাম উল্টো বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে পণ্যের দাম কমেছে সে হারে দেশের বাজারে কমছেনা বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। যুদ্ধের প্রভাব শুরুর আগে ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৮৫-৮৬ টাকা, ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত যা বেড়ে ১০৬ টাকায় ওঠে, যা বর্তমানে ১১৫ টাকার বেশি। এছাড়া ডলার সংকটে অনেকে পণ্য আমদানিও করতে পারছেনা বলে দাবি তাদের।
যার প্রভাব পড়েছে আমদানির অন্যদুটি পণ্য ডাল ও চিনির উপর। ব্যবসায়ীরা বলছেন ডলারের বাড়তি দাম না থাকলে চিনি ও ডালের দামও অনেকটা কমে আসতো।
বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি, যা যুদ্ধের আগে ছিল ৭৫-৭৮ টাকা কেজি। যুদ্ধের প্রভাবে দাম বেড়ে চলতি বছরের শুরুতেই ১১০-১২০ টাকায় পৌঁছে। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে আরেক দফা বেড়ে আর কমেনি দাম।
মশুর ডালের দাম বর্তমানে মানভেদে ১০৫-১৩৫ টাকা কেজি। যা গত মাস পর্যন্ত ৯৫-১৩০ টাকা কেজি ছিল। যুদ্ধের আগে মশুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৫-১৩৫ টাকা কেজি।