মিরাজ শামস
আগামী তিন বছরের জন্য একটি নতুন আমদানি নীতি আদেশ (আইপিও) প্রণয়ন করছে সরকার, যাতে ব্যবসার সুবিধায় যুক্ত করা হচ্ছে কয়েকটি নতুন ধারা।
প্রস্তাবিত নীতিতে লেনদেনের সময়, মূল্য এবং লেটার অফ ক্রেডিট (এল/সিএস) এর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, এটি চালু হলে আমদানি নিবন্ধন সংক্রান্ত বিভিন্ন ফি কমিয়ে আনবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
২০২১ থেকে ২০২৪ সালের জন্য আসন্ন আইপিওকে বিদ্যমান আমদানি বিধিগুলোর আধুনিকীকরণের একটি পথ বলে অভিহিত করেছে মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ব্যবসা সহজের সূচক আরও উন্নত হবে বলে মনে করা হয়।
ব্যবসার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে নতুন এ আইপিও, বেসরকারি খাতে ব্যবসার পথ প্রশস্ত করতে বিদ্যমান নীতিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বিশেষ করে লেটার অব ক্রেডিট ছাড়া আমদানির সুযোগ রাখা হয়েছে খসড়া ওই নীতিমালায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি) এএইচএম শফিকুজ্জামান দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির স্বার্থে ধারাবাহিক এ পরিবর্তন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি শাখার মতামত বিবেচনা করা হয়েছে। এখন আইপিওর খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
নীতিমালায় যে কোনো আন্তর্জাতিক জালিয়াতির জন্য শাস্তির বিধান থাকবে, যেমন ওভার-ইনভয়েসিং, আন্ডার-ইনভয়েসিং এবং মিসডেক্লারেশন এবং আমদানি লাইসেন্সের মেয়াদ ১ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর করা হবে।
সাম্প্রতিক একটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে প্রায় ৫৩ শতাংশ আমদানিকারক দেশে কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করার সময় অশুল্ক বাধার সম্মুখীন হন। নতুন আইপিও বিদ্যমান এ জটিলতাকে অনেকাংশে কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত আমদানি আদেশে বন্ডেড গুদাম সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানির মেয়াদ বর্তমান ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত নীতিতে বলা হয়েছে, একই বন্ডেড সুবিধার আওতায় পোশাক রপ্তানিকারক এবং টেক্সটাইল মালিকরা বর্তমান ৩৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে একজন শিল্পপতির সক্ষমতার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাঁচামাল আমদানি করতে পারবেন।
খসড়া আইপিও অনুসারে, নির্দিষ্ট কোনো ব্যাংকে এলসি খোলার বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোন গ্রাহক তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন ব্যাংকে এটি করতে পারেন।
নতুন খসড়া আইপিওর অনুসারে, কোনো ব্যক্তি নিবন্ধন ছাড়াই ১০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করতে পারবেন, যা বর্তমান নীতিতে ৭ হাজার ডলারে সীমাবদ্ধ। অনুমতির সেম্পল ছাড়া বিজ্ঞাপনের উপকরণ এবং উপহার সামগ্রীর আমদানি ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত করা যাবে, যা বর্তমান নীতিতে মাত্র ৩ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ।
এক ডজন পোশাকের রপ্তানি মূল্য ৬০ ডলার হলে মূল্য সংযোজন করতে হবে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানি মূল্য ৬০ ডলারের উপরে হলে মূল্য সংযোজন হতে হবে ১০ শতাংশ।
আর শিশুদের সব রপ্তানিযোগ্য পোশাকে মূল্য সংযোজন হতে হবে ১৫ শতাংশ।
খসড়া আইপিও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিমান, হেলিকপ্টার এবং তাদের যন্ত্রাংশ- নতুন এবং পুরানো উভয়ই আমদানি করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যদিও, বর্তমান নীতিমালায় এ ধরনের বিধান নেই।
এছাড়াও, খসড়া নীতিতে ভোজ্য লবণ আমদানির পথও প্রশস্ত করা হয়েছে, তবে তা নির্ভর করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমতির ওপর।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিকরা ৫ বছরের পুরনো ব্যবহৃত যানবাহন আমদানি করতে পারবেন, যদি যানবাহনটি ৮ বছর আয়ুকাল অতিক্রম না করে।
নতুন এ আইপিওতে অবশ্য ক্যাসিনো আইটেম এবং জুয়া খেলায় ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জামাদি আমদানি নিষিদ্ধ করছে।