প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ইইউ'র সর্বনিম্ন মূল্য তালিকায় ২য় বাংলাদেশ

আরিফুর রহমান তুহিন
২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:২৩:০৯ | আপডেট: ২ years আগে
ইইউ'র সর্বনিম্ন মূল্য তালিকায় ২য় বাংলাদেশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ বাংলাদেশ। এসব পণ্য আমদানির বিপরীতে পাকিস্তানের পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন মূল্য দেয় ইইউ।

ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অফিস - ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ পোশাক আমদানি পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়।

ইউরোস্ট্যাট অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাসে প্রতি কেজি কাপড়ের বিপরীতে বাংলাদেশকে পেমেন্ট করা হয়েছে ১৭.০৮ ডলার। যেখানে বিশ্বব্যাপী এর গড় ছিল ২২.৪১ ডলার।

দর কষাকষিতে অযোগ্যতা, পশ্চিমা বাজারের ওপর উচ্চ-নির্ভরতা এবং সস্তা শ্রম ব্যয় বাংলাদেশী পোশাকের ভালো দাম না পাওয়া এর প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে ইইউ'র নৈতিকতার অভাবকেও দায়ী করছেন তারা।

পুরো বিষয়টাকে ক্রেতাদের মানসিকতার বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

তিনি জানান, “পণ্যের বিপরীতে ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশকে ১৫-২০ শতাংশ কম অর্থ প্রদান করে ইইউ। অথচ তারাই সবসময় নীতি-নৈতিকতার কথা বলে।”

৪২.২১ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখছে বাংলাদেশ

ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ইইউতে ১৭.৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের তুলনায় ৪২.২১ শতাংশ বেশি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক খাতের গবেষণা ও উন্নয়নে উন্নতি এবং বিকল্প বাজারে প্রবেশের জন্য রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দেশি কাপড়ের দামও ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত এবং পশ্চিমা নির্ভরতা কমাতে আমরা বিকল্প বাজারের ওপর জোর দিচ্ছি। পাশাপাশি, আমরা নূন্যতম মূল্যসীমা নির্ধারণের জন্য কাজ করছি।”

ইউরোস্ট্যাটের মতে, এ বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে ৭৭.৭৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫.৮৭ শতাংশ বেশি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কাপড় সরবরাহ করে বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক প্রস্তুতকারক এবং রপ্তানিকারক দেশ চীন। এ সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ব্লকে ২২.৫৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। যা গত বছরের তুলনায় ২৫.১৯ শতাংশ বেশি।

এছাড়াও, এই সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের পোশাক রপ্তানি ১৪.৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটি ৯.১৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য সরবরাহ করেছে। ভারত ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য সরবরাহ করেছে। একইসঙ্গে দেশটির রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫.৮৫ শতাংশ। এছাড়াও ভিয়েতনামের ৩.২৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য সরবরাহের সঙ্গে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯.৬৫ শতাংশ।

কম্বোডিয়া এই সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২.৮১ বিলিয়ন মূল্যের পোশাক পণ্য সরবরাহ করেছে, একইসঙ্গে দেশটির রপ্তানিও ৪১.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইইউ'তে ২.৯৩ বিলিয়নের পণ্য সরবরাহ করেছে পাকিস্তান। এর ফলে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০.৭৬ শতাংশ।

কম মূল্য

ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনামকে প্রতি কেজি কাপড়ের জন্য গড়ে ৩০.৪৩ ডলার, তুরস্ককে ২৫.৫২ ডলার, চীনকে ২৩.২৯ ডলার, ভারতকে ২৩.২৬ ডলার, কম্বোডিয়াকে ২২.০৪ ডলার, বাংলাদেশকে ১৭.০৮ ডলার এবং পাকিস্তানকে ১৪.০৬ ডলার দিয়েছে ইইউ।

বাংলাদেশকে কম মূল্য প্রদানের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ বলেন, “আমাদের মূল্য দর কষাকষির ক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানের নয়। এছাড়াও, সঠিক মূল্যায়ন না করেই আমরা ব্যবসা প্রসারিত করি। এবং আমাদের রপ্তানিও প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমা বাজারের উপর নির্ভরশীল।”

পোশাক নির্মাতাদের সঠিক দাম না পাওয়ার আরেকটি কারণ হলো সস্তা শ্রম। কারণ ক্রেতারা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের বিশাল চাহিদার সক্ষমতা মেটাতে আমাদের প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক দরকার। কিন্তু পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন পশ্চিমা ক্রেতারা। যদি আমরা ইইউর বাইরে শক্তিশালী বাজার তৈরি করতে পারি তাহলে পণ্যের জন্য আরও ভালো দাম পাব।”

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “তুলনামূলক কম দাম পাচ্ছি আমরা, তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমাদের সদস্যদের ব্রেকইভেন প্রাইসের নিচে কোনো অর্ডার না নিতে বলে দিয়েছি আমরা।”