প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

এক বছরেই ইভ্যালির দায় বাড়লো ৩৭৯ কোটি টাকা

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২৬:৪৪ | আপডেট: ৩ years আগে
এক বছরেই ইভ্যালির দায় বাড়লো ৩৭৯ কোটি টাকা

মিরাজ শামস

মাত্র এক বছরেই গ্রাহক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ ৩৭৯ কোটি টাকা বেড়ে মোট দাঁড়িয়েছে ৫১৭ কোটি টাকায়।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইভ্যালি।

২০২০-২১ অর্থবছরে দায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৩ কোটি টাকায়, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৪১ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে ইভ্যালি ২ লাখ গ্রাহকের কাছে দায় ৩১১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১২৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সরবরাহকারীদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দায় ছিল ২০৬ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল মাত্র ১০.৪৬ কোটি টাকা।

উচ্চ ছাড়ের কারণে গ্রাহক এবং সরবরাহকারীদের দায় দ্রুত বাড়লেও এ পরিস্থিতিটিকে “স্বাভাবিক” বলে অভিহিত করছে ইভ্যালি।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বকেয়া পাওনা সুবিধা বাণিজ্যের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল উল্লেখ করেন, সরবরাহকারীদের সাথে তাদের বকেয়া সুবিধা চুক্তি ছিল। এখন ব্যবসা যেমন বাড়ছে, সেইসাথে পাওনার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নের জবাবেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মোহাম্মদ রাসেল। জানান, সরবরাহকারীদের সাথে পণ্য বিক্রির মুনাফার ১৫-২০ শতাংশ দেয়ার চুক্তি রয়েছে ইভ্যালির সাথে।

সরবরাহকারীদের বর্তমান দায়কে “খুব স্বাভাবিক”এবং “গ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন রাসেল। কিন্তু কখন এ পাওনা পরিশোধ করা হবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

ইভ্যালি দাবি করেছিল, আগামী ৫ মাসের মধ্যে গ্রাহকদের ৩১১ কোটি টাকার দায় মেটাবে। এ সময়ের মধ্যে তারা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি নতুন কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগও বাড়াবে।

সম্প্রতি যমুনা গ্রুপ ইভ্যালিতে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করলেও কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, আমরা রোববার ইভ্যালির দায় সম্পর্কে আর্থিক বিবৃতি ও তথ্য পেয়েছি। এটি পর্যালোচনা করব এবং গ্রাহক আর সরবরাহকারীদের দায় মেটানোর উপায় নিয়ে কাজ করব।

১৫ জুলাই পর্যন্ত ৪২৩ কোটি টাকা নিজেদের ব্র্যান্ড মূল্য দেখিয়েছে ইভ্যালি। যা ১২.১২ কোটি টাকা ছিল গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি তার ব্র্যান্ড মূল্য রেখেছিল ৪৫ লাখ টাকা।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এরইমধ্যে কোম্পানিটি তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সফল হলেই কেবল এর ব্র্যান্ড মূল্য বৃদ্ধি পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, অর্থ পাচারের সঙ্গে কোম্পানিটির সম্পৃক্ততা থাকার সন্দেহ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেল।

মন্ত্রণালয়টির অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, আমাদের ধারণা অর্থ অন্য কোথাও সরানো হয়েছে। হিসাবে অনেক গড়মিল আছে।

আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছি, বলে জানান হাফিজুর রহমান।

তিনি উল্লেখ করেন, ইভ্যালির সরবরাহকারীদের কেউই চুক্তি আইনের অধীনে বকেয়া পাওনা আদায়ে আদালতে যাননি। কেবল গ্রাহকরাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় অভিযোগ দায়ের করেছিন। অনেক অভিযোগের সমাধানও হয়েছে।

এ সংকটের একটি ভালো সমাধানের আশা করছেন মন্ত্রণালয়টির অতিরিক্ত সচিব ও ই-কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ইভ্যালিকে ঝামেলায় না ফেলে দায়গুলো নিষ্পত্তি করা। আন্ত-মন্ত্রণালয় কমিটি চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে একটি বৈঠক করবে। বৈঠকের পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ইভ্যালির বক্তব্য কী, তা জানতে চাইলে কোনো জবাব দেননি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।