মেহেদী হাসান
রাইড শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, কুরিয়ার এবং ই-কমার্সে সেবা দানকারী প্রযুক্তি ভিত্তিক স্টার্টআপ ‘পাঠাও’ এবার পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে।
এই পরিষেবা প্রদানকারীর নাম হবে ‘পাঠাও পে’। একইসাথে দেশের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালডাল ডটকমও পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি পাঠাওকে এ বিষয়ে অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দিয়েছে বলে দ্য বিজনেস পোস্ট’কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী এক বছর পেমেন্ট সার্ভিস প্ল্যাটফর্মটির সকল ধরনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেই কেবল চূড়ান্ত লাইসেন্স দেবে।
যখন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পিএসপি এবং পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটর (পিএসও) হিসেবে অনুমতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করে, তখন তাকে তার ব্যবসার ধারণা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগে জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুসারে, কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তখনই চূড়ান্ত অনুমোদন পায়, যখন পিএসপি ও পিএসও হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সব ধরনের সংশ্লিষ্ট নথি এবং ব্যবসায়িক সার্টিফিকেট পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্তুষ্ট হয়।
২০১৫ সালে জীবনকে সুন্দর করার স্বপ্ন নিয়ে হোসাইন এম ইলিয়াস, শিফাত আদনান এবং ফাহিম সালেহ বাংলাদেশে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি স্টার্টআপ ‘পাঠাও’ প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন এম ইলিয়াস দ্য বিজনেস পোস্ট’কে জানান, এ মুহূর্তে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন।
অবশ্য বড় পরিসরে গ্রাহকদের নিজস্ব সেবা দিতেই কোম্পানিটি ‘পাঠাও পে’ সার্ভিসটি চালু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালডাল ডট কমও পিএসপির অনুমোদন পেতে আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে দ্য বিজনেস পোস্ট’র প্রতিবেদক মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্ট করেন চালডালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিয়া আশরাফের সাথে। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, অনেক পিএসপি যারা ইতোমধ্যে লাইসেন্স পেয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রম এখনও শুরুই করেনি। যে কারণে আমরা এখন আরও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে তাদের লাইসেন্স দেবো।
পেমেন্ট পরিষেবা প্রদানকারীরা সরাসরি গ্রাহকদের পেমেন্ট দেয় বা পেমেন্ট প্রক্রিয়া করে। একটি নির্ধারিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের লেনদেন সম্পন্ন করে, যেমন ই-ওয়ালেট, মোবাইল ওয়ালেট ইত্যাদি।
এছাড়ও পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটররা তাদের গ্রাহকদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে তফসিলি ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেবা দেয়। যার মধ্যে রয়েছে পেমেন্ট গেটওয়ে, পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর ইত্যাদি।
এর আগে আইপে সিস্টেমস লিমিটেড, ডি মানি বাংলাদেশ লিমিটেড, রিকার্সন ফিনটেক লিমিটেড এবং গ্রিন অ্যান্ড রেড টেকনোলজিস লিমিটেড এই চার প্রতিষ্ঠানকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসাবে অনুমোদন দেয়া হয়।
এছাড়া পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর হিসাবে কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল অপর ৫ প্রতিষ্ঠান- আইটি কনসালটেন্টস, এসএসএল কমার্জ, সুরজো মুখী , প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড এবং পোর্টোনিক্স লিমিটেডকে।
২০২০ সালের মার্চে লাইসেন্সবিহীন পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) এবং পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরদের (পিএসও) কোনো ব্যাংকিং পরিষেবা বা লেনদেনের সুবিধা না দিতে, সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ বেশ কয়েকটি অবৈধ পিএসপি এবং পিএসও বাজারে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছিল।