মোহাম্মদ আইয়ুব আলী
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় সকল ব্যবসা কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে কম্পিউটার ও আইটি সংক্রান্ত ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল করোনা মহামারি।
করোনার কারণে অনলাইনকে বেছে নিয়েছিল একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট হাউজ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি ব্যাংক ও সরকারি অফিসও অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে কর্মীদের। আর তাতে কম্পিউটার এবং অন্যান্য আইটি জিনিসপত্রের খুচরা বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
রাজধানীর কম্পিউটার এবং আইটি আনুষাঙ্গিকের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের বিক্রেতারা বলেছেন, করোনা মহামারি চলাকালীন গ্রাহকদের প্রয়োজনীয়তা মেটানো তাদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল এবং তারা কঠিন সময় পার করেছেন।
১৪ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের প্রথম দশটি ফ্লোরে ৭৫০ টিরও বেশি কম্পিউটার এবং আইটি জিনিসপত্রের শোরুম রয়েছে। সেখানে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন লোক কর্মরত রয়েছে।
ঢাকার অভ্যন্তরে খুচরা কম্পিউটার এবং আইটি আনুষাঙ্গিক বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মালিকরা।
মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সুব্রত সরকার বলেন, বর্তমানে বাজারের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা। ২০০১ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা।
সুব্রত বলেন, মহামারি চলাকালীন আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারিনি।
তার দাবি, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার একমাত্র বাজার, যেখানে এক ছাদের নিচে কম্পিউটার এবং আইটি সংক্রান্ত সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।
মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে বিক্রি হওয়া আইটি পণ্যগুলোর বেশিরভাগই চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আমদানিকারকদের মধ্যে স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড, কম্পিউটার সোর্স, গ্লোবাল ব্র্যান্ড (প্রাইভেট) লিমিটেড, ইউসিসি এবং এক্সেল টেকনোলজিস লিমিটেড বাজারে বেশ প্রসিদ্ধ।
বাংলাদেশের সকল কম্পিউটার এবং আইটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের বাজারে খুচরা দোকান রয়েছে।
নতুন কম্পিউটারের পাশাপাশি সেকেন্ড-হ্যান্ড কম্পিউটারও বাজারে কেনাবেচা হয়। এছাড়াও বাজারে কম্পিউটার সার্ভিসিং এবং মেরামতের অনেক দোকান রয়েছে।
তবে ব্যবহৃত কম্পিউটার বিক্রি করতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পণ্য ক্রয়ের দলিল সঙ্গে আনতে হবে বলে জানিয়েছেন বাজার কমিটির এক নেতা।
সন্তানের জন্য একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনতে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে এসেছিলেন আরিফা খাতুন। কারণ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ওয়েব ভিত্তিক হয়ে উঠেছে এবং প্রযুক্তিও দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
মো. রকিবুল ইসলাম তার সিপিইউ সার্ভিসিং করতে বাজারে এসেছেন। গত ছয় মাস আগে তিনি এটি কিনেছিলেন। তবে ওয়ারেন্টির সুবিধার আওতায় বিনামূল্যে সার্ভিসিং পরিষেবা পেয়ে যান তিনি।
মাইক্রোসান সিস্টেমের স্বত্বাধিকারী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে গেমিং পণ্যগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
টেক হিলের বিক্রয় প্রতিনিধি কবির খান বলেন, চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কম্পিউটারের বিক্রি শীর্ষে এবং দামও বেড়েছে।
মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তৌফিক এহসান বলেন, এখানে সব ধরনের কম্পিউটার এবং আইটি সংক্রান্ত সমস্যা, এমনকি সবচেয়ে কঠিন এবং জটিল সমস্যার জন্যও সমাধান সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমরা গ্যারান্টিসহকারে ভালো পণ্য সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এটি ক্রেতাদের আকর্ষণ করে।
সন্ধ্যায় মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের নিচতলা এবং প্রবেশদ্বারে প্যাকেটজাত পণ্যের দেখা পাওয়া যায়। জানা যায়, এসব পণ্য কুরিয়ার পরিষেবার মাধ্যমে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের একজন ব্যবসায়ী এসএম আনোয়ার আইয়ুব জানান, প্রতিদিনই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্য সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, অনেক পাইকারি ক্রেতা ফোনে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য অর্ডার করেন। আমরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অর্ডারকৃত পণ্য সরবরাহ করি।
ইউএসবি এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসের এলিফ্যান্ট রোড শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ উল্লাহ খান জানান, আইটি সম্পর্কিত পণ্য দ্বারা অন্তত একটি লোড করা কাভার্ড ভ্যান দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য পৌঁছে দিয়ে থাকে, যার বেশিরভাগ পণ্য মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার থেকে যায়।