সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (৩০ অক্টোবর) নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করতে পারেনি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। লেনদেন শুরুর নির্ধারিত সময় সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট থাকলেও আজকের লেনদেনে শুরু হয় সকাল ১১ টায়।
প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে বিগত কয়েক বছরে বারবার সাময়িক সময়ের জন্য লেনদেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ট্রেডিং সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইতে সোমবারও (২৪ অক্টোবর) লেনদেন বন্ধ হয়েছিলো। তবে আজকের লেনদেন কারিগরি ক্রটির কারণে বিলম্বে শুরু হয়নি।
আজকের লেনেদেন দেরিতে শুরু হওয়ার কারণ হিসেবে ডিএসই'র ডিজিএম শফিকুর রহমান দ্য বিজনেস পোস্ট কে বলেন, বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের ৭০ টি কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। নিয়মানুযায়ী এ ৭০ টি কোম্পানির সার্কিট ব্রেকার ওপেন হওয়ার কথা থাকলেও ডিএসই'র অপারেশনাল টিমের ব্যর্থতার কারণে সবগুলি কোম্পানির সার্কিট ব্রেকার ওপেন হয়ে যায়। এজন্য সফটওয়্যারের সমস্যা দেখা দেয় তাই সময়মতো লেনদেন শুরু করতে সমস্যা হ
তিনি আরো বলেন, এ ধরণের সমস্যা ডিএসইতে আগে কখনও হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরণের সমস্যার পুনরাবৃত্তি এড়াতে ট্রেডিং সফটওয়্যার আরো আপডেট করতে হবে।
ডিএসই'র সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী দ্য বিজনেস পোস্ট’ কে বলেন, ‘আজকে যে সার্কিট ব্রেকারজনিত সমস্যাটা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে গতকালই এটার সমাধান করা যেতো।’
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর ট্রেডিং সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ওইদিন সকাল ১০টা ৫৮ মিনিট থেকে বন্ধ হয়ে যায় লেনদেন। যা দুপুর ২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ ছিলো। এরপর থেকে আবারও লেনদেন শুরু হয়। যা চলে ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। ওইদিন পোস্ট ক্লোজিং সেশন কমিয়ে ৫ মিনিট বা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত করা হয়েছিল।
সোমবার সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে লেনদেনের সাথে ডিএসই'র ওয়েবসাইট আপডেটও বন্ধ ছিল। তবে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন স্বাভাবিক ছিল।
গত বছরের ১৮ জুলাইও কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ডিএসইতে। ওইদিন সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর ১ ঘণ্টা ৯ মিনিট পর বেলা ১১টা ৯ মিনিটে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। ত্রুটি সারিয়ে ওইদিন ফের লেনদেন শুরু হয় দুপুর ১টায়। এদিন লেনদেনের সময়সীমা বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এ ধরনের সমস্যা অবশ্য নতুন কিছু নয়। আগেও বারবার ডিএসইতে কারিগরি ত্রুটি দেখা গেছে।
ডিএসইতে কারিগরি ত্রুটি
২০২০ সালের ১৮ আগস্ট ডিএসই ওয়েবসাইটের আপডেটেড ভার্সন সচল করার পর শেষ সেশনে বড় ঝামেলা পোহাতে হয় বিনিয়োগকারীদের। সে অবস্থা দু'দিন ছিল।
২০১৫ সালের ২৪ মে ডিএসই সার্ভারে কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন তিন ঘণ্টা ৫০ মিনিট বন্ধ থাকে।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ওএমএস প্লাসের জটিলতার কারণে লেনদেনের শুরুতে ব্রোকারেজ হাউসগুলো মূল সার্ভারে লগ-ইন করতে পারেনি।
২০১২ সালে ডিএসইর সার্ভারের কারিগরি ক্রটির কারণে লেনদেন শুরু হয় এক ঘণ্টা পর। এর আগে ২০১০ সালে দুইবার এমন কারিগরি ক্রটির মুখে পড়ে ডিএসই।
এ ব্যাপারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম দ্য বিজনেস পোস্ট কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ডিএসইতে লেনদেন বন্ধের ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ অক্টোবর ট্রেডিং সফটওয়্যারে সমস্যার কারণে লেনদেন বন্ধের ব্যাপারটি যেহেতু তদন্তাধীন তাই এ ব্যাপারে এখন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তদন্ত কমিটি এ ব্যাপারে রিপোর্ট জমা দিলে মন্তব্য করা যাবে।
উল্লেখ্য, ২৪ অক্টোবর লেনদেন চলাকালীন সময়ে ডিএসইতে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবার ঘটনায় বিএসইসির পরিচালক আবুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেসময় কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
তবে এ পর্যন্ত অনেকবার ডিএইসতে বারবার লেনদেন বন্ধের ঘটনা ঘটলেও এবং এ ব্যাপারে বার বার ডিএসইর পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।