প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড় সত্ত্বেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ

০৩ মার্চ ২০২২ ১৫:৫৭:৩৯ | আপডেট: ৩ years আগে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড় সত্ত্বেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ

মেহেদী হাসান

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো খেলাপি ঋণ (এনপিএল)। করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুবিধা দেয়া সত্ত্বেও এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩.৭৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালের একই সময়ে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ দশমিক ০৬ কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের শেষে এনপিএলের হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। যা এক বছর আগেও ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্যে এনপিএলের প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। প্রকৃত নন-পারফর্মিং লোনের পরিমাণ আরও বেশি হবে।

এনপিএল একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স্তরের তুলনায় বাংলাদেশের এই ঋণের অনুপাত বেশি। তবে নিয়ন্ত্রক সহনশীলতার কারণে খেলাপি ঋণ এতটা বাড়েনি।

এখনও দেশের কিছু ঋণগ্রহীতা এ সুবিধা ভোগ করছেন বলেও জানান তিনি।

এর আগে, ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে মহামারিকালীন সময়ে ঋণগ্রহীতাদের জন্য স্থগিতাদেশ চালু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে সুবিধাটি আরও কয়েকবার বৃদ্ধিও করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত কিস্তির ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে ঋণখেলাপি না হওয়ার সুযোগও দেয়া হয়েছিল।

চলতি বছরের মার্চ-জুনের দিকে এনপিএলের পরিমাণ আরও বাড়বে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেধে দেয়া সময় শেষ হয়েছে। যার কারণে এনপিএলের পরিমাণ বাড়ছে।

খেলাপি ঋণ বাড়ানো উচিত নয় উল্লেখ করে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, নন-পারফর্মিং ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কারণ বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে।

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে দেশে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। এর মধ্যে নন-পারফর্মিং ঋণের(এনপিএল) পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

নন-পারফর্মিং ঋণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে হবে। মূলত উচ্চ পরিমাণ এনপিএল নিয়ন্ত্রণ করতে কর্পোরেট শাসন এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।

এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৬ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৪২ হাজার ২৭২ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা।

২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিতে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৫২০ দশমিক ৪২ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। একই সময়ে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলিতে এনপিএল দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ দশমিক ৯১ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৪ হাজার ৬১ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা।

এছাড়াও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিতে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৮৫ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। যা আগের বছরে ছিল ২ হাজার ৩৮ দশমিক ১২ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরের দিকে এ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ১২৩ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে ত্রৈমাসিকে এনপিএলের হার ০.১৯ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ দশমিক ২৬ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, অক্টোবর-ডিসেম্বর মধ্যে তার ব্যাংকে এনপিএল বাড়েনি।

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, অনেক ঋণগ্রহীতা তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃনির্ধারণের মাধ্যমে ফের কিস্তি দেয়া শুরু করেছেন।

এ বছরের মার্চ-জুন মধ্যে খেলাপি ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত স্থগিতাদেশ শেষ হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, যদি ৯০ দিনের বেশি সময়ে কোনো ঋণ হিসাবের নির্ধারিত সুদ এবং আসল পরিশোধ করা না হলে তাকে খেলাপি ঋণ বলে। এটিকে আর্থিক খাতের দূষণও বলা হয়। খেলাপি ঋণ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।