প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

গ্রিলড চিকেন ছাড়া যেনো জীবনই চলে না!

আইয়ুব আলি
০৬ জুলাই ২০২২ ১৮:৪৪:৩৯ | আপডেট: ৩ years আগে
গ্রিলড চিকেন ছাড়া যেনো জীবনই চলে না!

বর্তমানে দেশজুড়ে গ্রিলড চিকেন ভীষণ জনপ্রিয় একটি খাবারদেশের মধ্যবিত্ত তরুণরা লক্ষণীয়ভাবে খাবারটির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে

অতীতে গ্রিলড চিকেন শুধু বিভাগীয় শহর এবং দেশের কিছু উন্নত এলাকায় পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে দেশের প্রায় সব জায়গায় এটি সহজলভ্য।

গ্রিলড তৈরীর ক্ষেত্রে প্রথমে ঝাল-মশলা দিয়ে মুরগী মাখিয়ে রাখা হয়। এরপর সেটি গ্রিলডড মেশিনে দেয়া হয় গ্রিলড করার জন্য। গ্রিলড চিকেনের ভেতরটা বেশ নরম এবং ভেজা থাকে। কিন্তু এর বাইরের অংশ মচমচে হয় যা ভোক্তাকে স্বর্গীয় স্বাদ দেয়।

সাধারণত গ্রিলড চিকেন নান রুটি, মেওনিজ, এবং সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। রেস্টুরেন্টগুলোতে বিকেল ৫টার পর এটি বৈকালিক নাস্তা হিসেবে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২০ সালের হোটেল-রেস্টুরেন্টের জরিপ অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ সালে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার বেড়েছে। যা এক দশক আগের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি। এর সিংহভাগের অবস্থান রাজধানী ঢাকায়।

যদিও এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই তবে ধারণা করা হয়, গড়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শহুরে রেস্টুরেন্টগুলো গ্রিলড চিকেন, কাবাব অথবা চিকেন বারবিকিউ বিক্রি করে। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট গ্রিলড মেশিন ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেন নবাবি ভোজের সত্ত্বাধিকারী কামরুল হাসান বিপু।

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, রাজধানীতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার রেস্তোরাঁয় গ্রিলড চিকেন পাওয়া যায়।

দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে ব্যবসা

ব্যবসায়ী বিপু বলেন, একসময় শুধু শহরের সচ্ছল, কর্পোরেট কর্মকর্তা এবং বিলাসী খাবারে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা মাসে ২ থেকে ৩ বার গ্রিলড চিকেন খেতেন। কিন্তু বর্তমানে হালকা নাশতা হিসেবে শহুরে লোকেরা এটি খান।

তিনি বিজনেস পোস্ট’কে আরও বলেন; এসব হোটেলগুলো প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ পিস গ্রিলড চিকেন বিক্রি করে।

ভোজনবিলাসী ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সুস্বাদু খাবারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

গত ৫০ বছরে গ্রিলড চিকেনের চাহিদা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান নবাবী ভোজ লালবাগের সত্ত্বাধিকারী বিপু।

বর্তমানে ৮০ শতাংশের বেশি হোটেলে গ্রিলড চিকেন তৈরী করা হয় যা আগে ছিলো মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ গ্রিলড চিকেন তৈরীতে মেশিন ব্যবহার করছে আর বাকিরা আগুনে পুড়িয়ে গ্রিলড চিকেন ও কাবাব তৈরী করছে বলে জানান বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন ফেনির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল আফসার কবির।

সালাউদ্দিন রোস্তোরার সত্ত্বাধিকারী মো. নাসিরউদ্দিন বিজনেস পোস্ট’কে বলেন; ক্রেতাদের চাহিদার কারণে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট বর্তমানে গ্রিলড চিকেন ও কাবাব তৈরী করছে। এই হার ৫ বছর আগে ছিলো মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।

পরিবর্তীত জীবনধারা অবদান রাখছে ব্যবসায়

নুরুল আফসার কবির বলেন; গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখন শহরের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষের চাহিদার কারণে মনোরম ও নিরিবিলি পরিবেশে অনেক রেস্তোরাঁ ও কাবাব হাউস তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মানুষ আরামদায়ক পরিবেশে বসে চিকেন বারবিকিউ, চিকেন কাবাব বা গ্রিলড চিকেন খেতে পারে এবং পরিবার স্বজনদের সাথে কিছু সময় কাটাতে পারে।

তিনি আরও বলেন অন্তত ৫০ টি রেস্টুরেন্ট ও কাবাব হাইজ ফেনিতে নির্মিত হয়েছে।

পরিবর্তীত জীবনধারা, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, প্রয়োজনীয়তার খাতিরে মানুষের চলাচল বৃদ্ধি এবং ঘরের বাহিরে স্ন্যাকস খাবারের চাহিদার ফলে স্থানীয়রা হোটেল ও রোস্তারাঁর খাবারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওসমান গণি।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি

প্রায় ২০ বছর ধরে গ্রিলড তৈরী করছেন আব্দুল হামিদ। যখন কেউ একটি সুস্বাদু গ্রিলড খাবারের দোকান খোলে তখন একজন পেশাদার গ্রিলড মেকারের প্রয়োজন হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে; প্রায় ২০ হাজার গ্রিলড চিকেন প্রস্তুতকারী এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন।

বিবিএস-এর জরিপ অনুযায়ী, মোট ২.২৮ মিলিয়ন মানুষ হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় কাজ করছে যা এক দশক আগে প্রায় ১০ লাখ ছিল।

গ্রিলড কাবাব মেশিনের চাহিদা বাড়ছে

একসময় গ্রিলড এবং কাবাব মেশিন আমদানি করা হতো তুর্কি, কোরিয়া, ইতালি, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। কিন্তু বর্তমানে এটি স্থানীয়ভাবে ঢাকার জিঞ্জিরায় তৈরী করা হয়। মো. ওসমান গনি বলেন; সব ধরনের গ্রিলড মেশিন ও কাবাব মেশিনের জন্য বিখ্যাত জায়গা হিসেবে পরিচিত রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন গ্রিলড চিকেন এবং কাবাব মেশিনের চাহিদা আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।