প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

চামড়া শিল্প: ২৪৪ বিলিয়ন ডলারের বাজারে বাংলাদেশের অংশ ০.৫%

রোকন উদ্দীন
০৮ অক্টোবর ২০২২ ১৬:০৬:১১ | আপডেট: ২ years আগে
চামড়া শিল্প: ২৪৪ বিলিয়ন ডলারের বাজারে বাংলাদেশের অংশ ০.৫%

বাংলাদেশ গবাদি পশু উৎপাদনে বিশ্বে ১২তম হলেও পশুর চামড়া উৎপাদনে পিছিয়ে অনেকখানি পিছিয়ে। বিশ্বে মোট ২৪৪ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ০.৫ শতাংশ। দেশিয় চামড়ার দামও আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম।

যেখানে ওয়েট-ব্লু চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রতি বর্গফুট ১০০-১৫০ টাকা সেখানে আমাদের মূল্য মাত্র ৬০-৯০ টাকা। চামড়া শিল্প নানা সমস্যায় মধ্যে থাকায় সম্ভাবনা থাকা সত্বেও চামড়া শিল্পের এমন চিত্র দীর্ঘ দিন ধরে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আয়োজিত ‘কাঁচা চামড়া ন্যয্যমুল্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক গণশুনানিতে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহফুজা আখতার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিশনের উপ-প্রধান (চলতি দায়ীত্ব) মো. মাহমুদুল হাসান। মূল প্রবন্ধে চামড়া শিল্পের জন্য ৭টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। এতে বলা হয়, ঈদুল আজহার সময় অতিমাত্রায় সরবরাহের ফলে চামড়া বিক্রয় ও সংগ্রহে অনীহার কারণে কাঁচা চামড়ার একটি বড় অংশ প্রক্রিয়াজাতকরণে সমস্যা হয়; চামড়ার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সরকার কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি প্রদান করে।

নানা সমস্যার চামড়া শিল্পের রপ্তানি পিছিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩-২০১৪ সালেও দেশ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি কাঁচা ও প্রক্রিয়াজাত (র‌্য হাইড এন্ড স্কীন এন্ড লেদার) চামড়া রপ্তানি হতো। যা সর্বশেষ ২০২১-২২ সালে ছিল ১৫০ মিলিয়নের কিছু বেশি। বিপরীতে গত এক বছরে প্রায় ৭২ মিলিয়ন ডলারে চামড়ার আমদানি বেড়েছে। এজন্য ৭-৮টি সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

২০১৭ সালের পর ক্রমাগত রপ্তানি হ্রাস, চামড়া শিল্প নগরী-তে ট্যানারি স্থানান্তরের ফলে এ শিল্পে তারল্য সংকট থেকেই চামড়া শিল্পে সমস্যার শুরু; বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে (চীন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ এবং কোভিড ১৯) বিশ্ব বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা সামগ্রিকভাবে নিম্নমুখী; সিনথেটিক/ফেব্রিক্সের তৈরি পাদুকা, ব্যাগ, ইত্যাদি পণ্যের দাম কম এবং ফ্যাশনেবল হওয়ায় চামড়াজাত পণ্যের বিকল্প হিসেবে জায়গা দখল করেছে; এলডব্লিউজি-এর সনদ না থাকায় সিইটিপি’র কার্যকারিতা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই ব্র্যান্ডেড রপ্তানি পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশি চামড়া ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে; ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রপ্তানিতে অধিক হারে চীন নির্ভরতা; দেশে উৎপাদিত চামড়ার স্থানীয় ব্যবহার বৃদ্ধি করতে না পারা; ধারাবাহিকভাবে অবিক্রিত চামড়ার মজুদ বাড়তে থাকা; জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে।

এই খাতে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চীন। বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। সামগ্রিকভাবে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন। আর গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১২তম।

ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কাঁচা চামড়া ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে এ খাত সংশ্লিষ্ট ভোক্তা পর্যায়ে সকলে উপকৃত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পণ্য বহুমুখীকরণের জন্য পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিও পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি জন্য গুরুত্ব প্রদান করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, গণ-শুনানিতে উন্মুক্ত আলোচনায় প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কাঁচা চামড়ার মূল্য নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।