ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে চাহিদা বেড়েছে ছাতার। বাড়তে শুরু করেছে বিক্রি। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছাতার বিক্রি বেড়েছে অন্তত তিন থেকে চারগুণ।
কয়েকগুণ বিক্রি বাড়ার পেছনে যদিও ভারী বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি একটি ভূমিকা পালন করেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে প্রবল গ্রীষ্মের তাপও ছাতার প্রয়োজনীয়তা বাড়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া বর্ষা ঘনিয়ে আসায় ছাতার বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছাতা বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। যেহেতু বর্ষাকালও আসছে, তাই ছাতার চাহিদা বাড়ছে। প্রতি বছর মে থেকে আগস্টের মধ্যে এ চাহিদা বাড়ে।
মান ও আকারের ভিত্তিতে ছাতার দাম ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
রাজধানীর পুরান ঢাকা, গুলিস্তান ও মৌচাক এলাকার বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সহজে বহনযোগ্য ছোট ছাতাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি ।
খুচরা বাজারে ছাতা খুঁজছেন এমন কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টির কারণে চাহিদা বেড়েছে। তাই দামও বাড়তি।
রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে ছাতা কিনতে আসা সেলিনা কাজী জানান, তার ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলের জন্য রংধনু রঙের ছাতা কিনতে তাকে ৫৫০ টাকা গুনতে হয়েছে। ছাতার এ দাম প্রয়োজনের তুলনায় বেশ বাড়তি বলেই মনে হয়েছে তার।
ছাতা ব্যবসায়ীদের মতে, স্থানীয়ভাবে ছাতা খুব কমই তৈরি হয়। বেশিরভাগ ছাতাই এসেছে চীন থেকে। তবে পুরান ঢাকার চকবাজার ও ইমামগঞ্জে কিছু স্থানীয় নির্মাতা রয়েছেন, যারা চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ওয়াটারপ্রুফ কাপড় ব্যবহার করে ছাতা তৈরি করেন।
দেশের ছাতা শিল্পের সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও এর আকার ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে এবং ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করেন তারা।
সহজে বহনযোগ্য ছোট ছাতার চাহিদা বেশি
চকবাজারের মুঘলটুলি এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স আল সাফিন ট্রেডার্সের মালিক মাসুদ রানা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, তারা ছোট ও বড় উভয় ধরনের ছাতা বিক্রি করেন। "ছোট ছাতার চাহিদা খুব বেশি।"
তিনি বলেন, আগে শরীফ ব্র্যান্ডের ছাতার চাহিদা বেশি থাকলেও এখন মানুষ শংকর, রহমান, এটলাস ও মুন ব্র্যান্ডের ছাতা খোঁজে। এর মধ্যে শঙ্কর ছাতা এখন চাহিদার শীর্ষে।
আরবি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, আকার, মান ও নকশার ওপর নির্ভর করে আমদানি করা ছাতার পাইকারি দাম ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। একটি একক ভাঁজ ছাতার দাম সাধারণত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, একটি দ্বিগুণ ভাঁজ ছাতার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং তিন ভাঁজওয়ালা ছাতার দাম ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা মধ্যে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে তৈরি সিঙ্গেল ফোল্ড ছাতার দাম সাধারণত ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা মধ্যে।
তবে বেশ কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শিশুদের ছাতা। এসব ছাতা সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ টাকা মধ্যে বিক্রি হয় তবে ডিজাইন এবং মানের ভিত্তিতে বাজারভেদে এ দাম বেশি বা কম হতে পারে বলে জানান হুমায়ুন।
গাজীপুরের জয়দেবপুরের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, ইমামগঞ্জ থেকে ১০০টি ছাতা কিনেছি। সম্প্রতি ভারী বর্ষণের পর ছাতার চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে এবং বর্ষাকালেও তা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমি যে ছাতাগুলো কিনেছি তার বেশিরভাগই আকারে ছোট কারণ এগুলো সহজেই বহনযোগ্য এবং চাহিদা বেশি। এছাড়া কিছু বড় ছাতাও কিনেছি কারণ বয়স্কদের মধ্যে এর চাহিদা রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ছাতা প্রতি ১০০ টাকা বা তার বেশি লাভের আশা করছেন তিনি।
গুলিস্তান হল মার্কেট নামে পরিচিত গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের ছাতা বিক্রেতা আবু তাহের বলেন, রং, ডিজাইন ও দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় তরুণ ও মধ্যবয়সীদের কাছে আমদানি করা ছাতার চাহিদা বেশি।
“বেশিরভাগ ক্রেতা এক রঙের ছাতা পছন্দ করেন। তবে বিভিন্ন ডিজাইনের ছাতারও চাহিদা ভালো। কিছু ক্রেতা মানের চেয়ে ডিজাইনে বেশি আগ্রহ দেখান।”
ছাতা প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাভ করার চেষ্টা করেন এই ব্যবসায়ী।