গত দুই বছর করোনার কারণে জামদানি শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ বছর ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জের জামদানি শিল্প। ঈদকে সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে এবার জামদানি পল্লী থেকে সরাসরি শাড়ি বিক্রির থেকে অনলাইনে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁতিরা।
এ বছর অনলাইনে প্রায় ১০ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী তাঁতিরা।
প্রাচীনকালের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীদের অতি পরিচিত। আর জামদানির আঁতুরঘর হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া বিসিক শিল্প নগরীর জামদানি পল্লী। এখানে এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫ হাজার তাঁতি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে জামদানি পল্লীর ঘরে ঘরে চলছে শাড়ি তৈরীর কাজ। নানা রকম ডিজাইনে মনের মাধুরি মিশিয়ে তাঁতিরা তৈরী করছে জামদানি শাড়ি। প্রত্যেকটি ঘর থেকে ভেসে আসছে জামদানি তৈরীর খটখট শব্দ।
পল্লীতে প্রায় ১২টি শো-রুম রয়েছে। প্রতি বছর শো-রুমগুলোতে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এ বছর তা দেখা যায়নি। তবে পল্লীতে সরাসরি ক্রেতারা না আসলেও অনলাইনে জামদানি খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। করোনা পরিস্থিতিতে জামদানির বাজার দখল করে নিয়েছে ই-কমার্স।
তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ও লকডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার তাঁতি পরিবার। লকডাউন ও করোনা থেকে ঘুরে দাড়াতে তাঁতিরা ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জামদানি শাড়ি বিক্রির নতুন বাজার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।
জামদানি শাড়ির আধুনিকায়ন ও তাঁতীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে জামদানি পল্লীতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমানে পল্লীর তাঁতি ও দোকান মালিকদের সবারই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি বিক্রেতাদের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ই-কমার্সে বেশ সাড়া পাচ্ছে তাঁতি ও দোকান মালিকরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইল তৈরী ও পেইজ খুলে শাড়ির ছবির সথে মূল্য বাঁধিয়ে আপলোড করছেন। যাদের পছন্দ হচ্ছে অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে শাড়ি হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা দিচ্ছেন।
বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের শাড়িগুলো। এক একটি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়াও তাঁতিদের কাছ থেকে শাড়ি কিনে অনেকেই অনলাইনে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
পল্লীর বিসমিল্লাহ জামদানির মালিক আসিফ জানান, দোকানের পাশাপাশি বিসমিল্লাহ জামদানি নামে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পেইজ রয়েছে। বর্তমানে দোকানে বিক্রি কমে গেলেও ঈদকে সামনে রেখে অনলাইনে খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে। পল্লীতে ক্রেতারা খুব একটা আসে না। ক্রেতারা অনলাইনে শাড়ি পছন্দ করলে, আমরা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেই।
সোহাগ জামদানির মালিক সোহাগ জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম গত ২০ বছর ধরে জামদানি শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। পল্লীতে তার বাবার দোকান রয়েছে। তিনি সরকারি মুড়াপাড়া কলেজে অনার্সে লেখাপড়া করছেন। পাইকারির পাশাপাশি অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রি শুরু করেন।
তিনি গত বছর সোহাগ জামদানি নামে ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলেন। পেইজটিতে নিয়মিত জামদানি শাড়ির ছবি তুলে আপলোড করতেন। কয়েক মাসের মধ্যেই দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও শাড়ি বিক্রি শুরু হয়। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় ফেসবুকে শাড়ি বিক্রি বেশি হচ্ছে। তার মতো বেশিরভাগ তাঁতিই এখন অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রি করে বেশি লাভবান হচ্ছে।
তাঁত কারিগরদের অভিযোগ, জামদানি শাড়ির বিক্রি বাড়লেও বাড়েনি তাদের মজুরি। মজুরি না বাড়ায় অনেক তাতঁ কারিগর পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে এই মজুরি দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
তাতঁকল মালিকদের দাবি, সুতার দাম বাড়ার কারণে শাড়ি বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাও ভালো উপার্জন না। তাই কারিগরদের মজুরীও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।