ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের জন্য ব্যাংক ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
রোববার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এই আহ্বান জানান তিনি।
তার মতে, ঋণ শ্রেণিকরণের মেয়াদ বাড়লে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি আসবে এবং করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত সম্ভব হবে। এজন্য ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা নিঃশর্তভাবে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
এসময় বাংলাদেশ ব্যাংককে ঋণ শ্রেণীকরণ না করার মেয়াদ বৃদ্ধিসংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার আহ্বানও জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তাড়াহুড়ো করে নতুন আয়কর আইন চূড়ান্ত না করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেন তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমানে একটি আয়কর আইন প্রযোজ্য রয়েছে, তাই এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নতুন আইন প্রণয়ণ করা উচিত।
একটি আয়কর আইন ইতোমধ্যেই চালু রয়েছে। এজন্য এফবিসিসিআইসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন আইন গঠন করা উচিত।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, “চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।”
সভায় জানানো হয়, উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় কমিটি এবং কমিটির অধীন বিভিন্ন উপ-কমিটির বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এফবিসিসিআই।
এছাড়া আগামী ২০২৬ সালের পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পলিসি অ্যাডভোকেসির অংশ হিসেবে “ইন্টারনাল রিসোর্স মোবিলাইজেশন এন্ড ট্যারিফ রেশনালাইজেশন”, “গ্লোবাল মার্কেট এক্সেস ২০২১-২০২৬ অ্যান্ড বিয়ন্ড”, “ইনভেস্টমেন্ট মেজারস ফর সাসটেইনেবল ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট” ও “সাসটেইনেবল এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট, সাবসিডিস অ্যান্ড ইনসেনটিভস” শীর্ষক চারটি কর্মকৌশল হ্যান্ডবুক আকারে প্রণয়ন করা হয়েছে, যা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
জসিম উদ্দিন বলেন, এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এফবিসিসিআইতে একটি ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। এফবিসিসিআইকে একটি গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে।
এর ফলে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ আরও জোরালোভাবে পেশ করতে পারবে এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই সভাপতি তার বক্তব্যে আরও বলেন, “দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনটির দরজা সকল ব্যবসায়ীদের জন্য খোলা। তাদের যেকোনো সমস্যায় পাশে থাকাবে এফবিসিসিআই। এজন্য ইতিমধ্যে ৭৮টি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হয়েছে, যারা খাতভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং দ্রুত সমাধানে কাজ করবে।”
শিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে এফবিসিসিআই যৌথভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এফবিসিসিআইতে একটি নিরাপত্তা পরিষদও গঠন করা হয়েছে।”
ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করোনাকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যও দেশব্যাপী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করেছে এফবিসিসিআই। এছাড়াও বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তীকে স্বরণীয় করতে ১৬ দিনব্যাপী “বিজয়ের ৫০ বছর: লাল-সবুজের মহোৎসব” আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে ৫০ জন ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধাকে সংবধর্না দেবে এফবিসিসিআই।
এ সময় স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে ৫০ জন ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধাকে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সংবধর্না ঘোষণাও দেন সংগঠনটির সভাপতি।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বার্ষিক সভায় সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহসভাপতি এম এ মোমেন, মো. আমিনুল হক শামীম ও মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দিন আলমগীর, মো. হাবিব উল্লাহ ও এম এ রাজ্জাকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।