প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

জ্বালানি তেল আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা

হামিমুর রহমান ওয়ালিউল্লাহ
২৩ মে ২০২৩ ১২:১২:০১ | আপডেট: ২ years আগে
জ্বালানি তেল আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা

জ্বালানি তেল এবং বিদ্যুতের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পর, সরকার ২০২৪ অর্থবছরের পরবর্তী বাজেটে পেট্রোলিয়াম, অপরিশোধিত তেল, জেট ফুয়েল এবং ফার্নেস অয়েলসহ জ্বালানি তেলের আমদানির উপর অগ্রিম কর প্রত্যাহার করতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে এটি ভোক্তাদের উপর আরোপিত বোঝায় কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাজেট প্রস্তাব প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা  জানিয়েছেন, বর্তমানে জ্বালানি তেল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থনৈতিক বছর ২০২৪-এর আসন্ন বাজেটে এটি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে। 

বাজেট প্রস্তাবনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, গাড়ি, মোটরবাইক, বিমান, জেনারেটর এবং কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে প্রয়োজনীয় মেশিনে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল সম্পর্কিত তেরোটি হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এনবিআর উৎপাদন খাতকে সহজতর করার পরিকল্পনা করেছে এবং গৃহস্থালি ও শিল্প উৎপাদনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের ভর্তুকি কমিয়েছে।

ভর্তুকি যৌক্তিককরণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্তগুলির মধ্যে একটি এবং সরকার ভর্তুকি উপাদান কমাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম সমন্বয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কর্তৃপক্ষ বলছে, এনবিআর অগ্রিম কর প্রত্যাহার করলে জ্বালানি আমদানির সময় করের অর্থ ব্যয় করায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে সরকারের ভর্তুকি হ্রাস পেতে পারে।

সরকার এ বছর তিনবার বিদ্যুতের শুল্ক বাড়িয়েছে প্রতিবার ৫ শতাংশ করে। যদিও এটি এখনও বিদ্যুতের ভর্তুকিতে লাগাম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। অর্থনৈতিক বছর-২০২৩ এর সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি ৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল।

এছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ গত বছরের আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম ৪২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫১.৬ শতাংশ করেছে। এই মূল্য বৃদ্ধি ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা এবং অকটেন ও পেট্রোলের দাম প্রতি লিটার ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়। পরে একই মাসে সরকার প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে জ্বালানির দাম কমায়।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, রি-ফুয়েলিং স্টেশনে ডিজেল ও কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে ১০৯ টাকা, পেট্রোল ১২৫ টাকা এবং অকটেন ১৩০ টাকায়। এনবিআর আমদানি শুল্ক ৩৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২.৭৫ শতাংশ করার একদিন পর এই সিদ্ধান্ত এল।

অগ্রিম কর প্রত্যাহারের জন্য এনবিআর আসন্ন বাজেটে পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেল, অপরিশোধিত, এইচবিওসি ধরনের মোটর স্পিরিট, এভিয়েশন স্পিরিটসহ অন্যান্য মোটর স্পিরিট অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

অবশ্য স্পিরিট টাইপ জেট ফুয়েল, হোয়াইট স্পিরিট, ন্যাফথা, সব ধরনের কেরোসিন-টাইপ জেট ফুয়েল এবং অন্যান্য কেরোসিন, লাইট এবং হাই স্পিড ডিজেল তেলের পাশাপাশি ফার্নেস অয়েলের উপর অগ্রিম ট্যাক্স আগামী অর্থবছরে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি এ প্রস্তাবগুলো অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা করা হয়ে এবং গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

বর্তমানে প্রস্তাবগুলি আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায়ে রয়েছে। আগামী ১ জুন সংসদে বাজেট পেশ হওয়ার কথা রয়েছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “জ্বালানি তেলের ওপর অগ্রিম কর আরও আগেই তুলে নেওয়া উচিত ছিল এবং কোনো ধরনের অগ্রিম কর রাখা উচিত নয়।”

তিনি বলেন,“এটা যৌক্তিক নয়। কিন্তু আমরা আমদানির ওপর যে ধরনের ট্যাক্স চাপিয়ে দিই আইএমএফ এটা পছন্দ করে না কিন্তু এনবিআর করে।”

তিনি আরও বলেন, “জ্বালানির ওপর শুধু ভ্যাট থাকা উচিত, অন্য কিছু নয়। আমাদের দেশে জ্বালানি নেই, আমদানি করতে হবে। আমরা ভর্তুকি চাই না, কর চাই না। যেহেতু জ্বালানি তেল একটি বহুল ব্যবহৃত পণ্য, এটিতে ট্যাক্স আরোপ করা ঠিক নয়। সরকারের উচিত সমস্ত কর অপসারণ করা।”

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট এম শামসুল আলম বলেন, “আমরা দাম কমার সমন্বয় করে একটি স্থিতিশীল তহবিল গঠনের জন্য সরকারকে সুপারিশ করেছি। যাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তহবিল থেকে তা সমন্বয় করা যায় এবং দাম কমে গেলে তহবিলে দেওয়া যায়। কিন্তু সরকার এটি করে না।”