দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের (ডিএসই) ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
ডিএসইর মহাব্যস্থাপক ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস’র সঞ্চালনায় বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান৷ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়।
সভার শুরুতেই ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট মোঃ রকিবুর রহমান ও পরিচালক হাবিবুল্লাহ বাহারসহ ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার কোম্পানির প্রতিনিধি, কোম্পানির চেয়ারম্যান, সাবেক পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডার বা ট্রেকহোল্ডার প্রতিনিধিবৃন্দের আপনজন যাঁরা ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ডিএসই’র ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস বাজারে গতিশীল অবস্থা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনার মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার প্রত্যাশা করছিল তখনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেই গতি মন্থর করে দেয়৷ ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয় বিশ্বের পুঁজিবাজারে৷ দেশের পুঁজিবাজারও এ অবস্থা থেকে বাদ পড়েনি৷
তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে বাজার চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। লেনদেন ও সূচক কমতে থাকে৷ টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে৷ বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ হতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷
ডিএসইর অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান পরিচালনা পরিষদ দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকেই ত্রুটিবিহীন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম প্রদানের মাধ্যমে ডিএসই’র ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিশ্বায়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও বিকাশের ফলে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য মডেল এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রেক্ষাপট ও গতিপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশনের ওপর ব্যাপক কার্যক্রম গৃহিত হয়েছে।
এছাড়াও বাজারের গতিকে ধরে রাখতে ডিএসই বিভিন্ন গ্রুপ অব কোম্পানিজ, টেক স্টার্টআপ এবং গ্রোথ স্টেজ কোম্পানিকে বাজারে আনার মাধ্যমে পণ্যের বৈচিত্র্য আনয়নেও কাজ করছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ইসলামী সুকুক বন্ড তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ডিএসই’র ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বহুল প্রতিক্ষিত সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেনের শুরু হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ৬টি কোম্পানি নিয়ে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্মের লেনদেনের শুভসূচনা করে। খুব শীঘ্রই পুঁজিবাজারে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড-এ (এটিবি) লেনদেন শুরু হবে। তাছাড়া, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) চালুর কার্যক্রমও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
২টি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানী এপিআই কানেক্টিভিটি স্থাপন করে তাদের নিজস্ব ওএমএস এর মাধ্যমে লেনদেন শুরু করছে। এছাড়াও ডিএসই থেকে ১১টি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে এপিআই ইউএটি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আশা করা যায় যে, অচিরেই এ সকল কোম্পানি নিজস্ব অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) এর মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন করতে পারবে।
ডিএসইর বর্তমান বোর্ডের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল এক্সচেঞ্জের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক ডেটা সেন্টার তৈরি করা। এই উদ্দেশ্যে ট্রেকহোল্ডারদের ট্রেডিং এর সুবিধার্থে ম্যাচিং ইঞ্জিন ও অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) হোস্ট করার জন্য ডিএসই টাওয়ার নিকুঞ্জে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০৬টি রেকের সুবিধা সম্বলিত একটি টায়ার-৩ ডেটা সেন্টারের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ডেটা সেন্টারের হার্ডওয়ার স্থাপনের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে প্রয়োজনীয় সফট্ওয়্যার সংযোজনের পর শীঘ্রই ডাটা সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।
জাতীয় অর্থনীতির নিরবিচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিএসইর সেবা ও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক বেশি। কোন দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের পুঁজিবাজারের কার্যক্রমকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে মোনায়েম বিজনেস ডিসট্রিক্ট এ ২৪ রেকের একটি ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডেটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
জাতীয় অর্থনীতির নিরবিচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ডিএসই’র সেবা ও কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত ঝুঁকিও অনেক বেশি৷ ফলে কোন দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের পুঁজিবাজারের কার্যক্রমকে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে৷ সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে সচল রাখতে একটি ডিজাস্টার রিকভারি (ডিআর) সাইট স্থাপনের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ ডেটা সেন্টার এবং ডিআর প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিএসই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রবেশ করবে এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে৷
নিকুঞ্চ ডিএসই টাওয়ার প্রসঙ্গে ইউনুসুর রহমান বলেন, আপনাদের বহুদিনের প্রতীক্ষিত ডিএসই টাওয়ারকে বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল হাবে পরিণত করার জন্য পুঁজিবাজারের প্রধান স্টেকহোল্ডারগণ এই টাওয়ারে অফিস স্থাপন করেছেন৷ অনেকের অফিস স্থাপন প্রক্রিয়াধীণ রয়েছে৷
এছাড়াও পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) ডিএসই টাওয়ারে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে৷ ইতোমধ্যে ৭টি ব্যাংক ব্রাঞ্চ অফিস স্থাপন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে৷
এ সময় তিনি পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, যিনি সবসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তথা পুঁজিবাজার উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন৷
একই সাথে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল-এর প্রতি৷ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজারবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগের উত্তম মাধ্যম হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে৷
এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্রিয় সমর্থনকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন৷ সকলের সহযোগিতায় আজ যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত৷ স্টক এক্সচেঞ্জের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে নীতি সমর্থন, দিকনির্দেশনা এবং পরামর্শের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান৷
আরও ধন্যবাদ জানান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ, বোর্ড কমিটি, কৌশলগত বিনিয়োগকারী, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সহ ট্রেকহোল্ডার প্রতিনিধিবৃন্দকে৷
পরে শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০২২ সালের ৩০ জুন তারিখে সমাপ্ত অর্থবছরের কোম্পানির পরিচালকমন্ডলীর প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী গ্রহণ, বিবেচিত ও অনুমোদিত হয়।
এছাড়াও ৩০ জুন ২০২২ তারিখে সমাপ্ত অর্থবছর পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশকৃত ৬ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয় এবং পরবর্তী অর্থবছরের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের পারিতোষিক নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়াও ২২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ডিএস্ই’র পরিচালনা পর্ষদের ২টি শূণ্য পদে নির্বাচনে মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোঃ শাকিল রিজভীকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ এ হাফিজ এবং ৬১তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তারা পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভূক্ত হন।
সভায় বক্তব্য প্রধান করেন প্রাইলিংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডাঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাইফুদ্দীন, সিএফএ, আলি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আকবর আলী, গ্রীনল্যান্ড ইক্যুইটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রাজিব আহসান, শ্যামল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাজেদুল ইসলাম, রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও, পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আহসান উল্ল্যাহ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিঃ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাউছার আল মামুন এবং এ্যাংকর সিকিউরিটিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জেড এম নাজিম উদ্দিন।