চলতি বছরের শেষ দিকে প্রায় ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে ভারত থেকে আসছে আমদানির ডিজেল।
বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পুরো শেষ হতে আরও ২/১ মাস লাগবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে ওয়াগনের পরিবর্তে পাইপ লাইনে ডিজেল আমদানি করে বছরে কয়েক কোটি টাকার সাশ্রয় হবে সরকারের। এর ফলে বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলায় অল্প সময় ও কম খরচে ডিজেল পাওয়া যাবে।
পার্বতীপুর উপজেলা সদরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ভারতের শিলিগুঁড়ির নুমানিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের (এনআরএল) মাধ্যমে ডিজেল আমদানির যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও খুলনার মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রেলওয়ের তেলবাহী ওয়াগনে দেশের উত্তরাঞ্চলে ডিজেল সরবরাহ করা হয়, যাতে সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে পার্বতীপুরে তেল আনতে প্রতি ব্যারেলের পরিবহন ব্যয় হয় প্রায় ৮ ডলার। কিন্তু পাইপ লাইনে ভারত থেকে আমদানি করা ডিজেল পার্বতীপুরে আনতে ব্যয় হবে ব্যারেল প্রতি ৫ ডলার। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে পরিবহনের ক্ষেত্রে সময় লাগতো ২/১ দিন। আর পাইপ লাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করতে লাগবে ১ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়। তাই সরকার সব দিক বিবেচনা করে কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় নিরবচ্ছিন্ন ডিজেল সরবরাহের গতি বাড়াতে শিলিগুঁড়ির এনআরএল থেকে ডিজেল আমদানির পরিকল্পনা নেয়।
শিলিগুঁড়ি থেকে পার্বতীপুর ডিপোর দূরত্ব ১৩১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতীয় অংশে ৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে ৮২ কিলোমিটার, দিনাজপুরে ৩৫ কিলোমিটার ও নীলফামারী জেলা এলাকায় ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার ৩০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তবে ব্যয়বহুল এই প্রকল্পে পাইপ কেনা, স্থাপন করা ও কারিগরি যাবতীয় ব্যয় ভারতীয় সরকার বহন করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির পর ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইনের কাজ শুরু হয়।
বিপিসি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পাইপ লাইন প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে করোনার কারণে কাজের গতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পার্বতীপুর ডিপোতে বাফার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা স্টিলের পাত এখনো না আসায় কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে এই ডিপোর মজুদের ধারণ ক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি।
সূত্রটি জানায়, বছরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রায় ১ মিলিয়ন মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করবে। ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ডিজেল আমদানির পরিমাণ ৪ থেকে ৫ মেট্রিক টন করে বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমানে এনআরএল পশ্চিমবঙ্গ রেল কর্তৃপক্ষের ওয়াগনের মাধ্যমে প্রতি মাসে বাংলাদেশে প্রায় ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করে। আর বিপিসি রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য ডিপোতে ডিজেল সরবরাহ করে থাকে।
আমন ও বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকায় সরকার বিপিসি’র মাধ্যমে সরবরাহ পরিস্থিতি গতিশীল করতে চায়। এই লক্ষ্যে ডিজেল আমদানির যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি অল্প সময় ও কম খরচে পেট্রোল পাম্পগুলো কৃষকদের কাছে ডিজেল সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।
বিপিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিক প্রহরী নিযুক্ত করা হবে। যাদের বেতন-ভাতার ব্যয় বহন করবে বিপিসি।