প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ

আরিফুর রহমান তুহিন
১৩ মার্চ ২০২২ ১২:৫৪:১৫ | আপডেট: ৩ years আগে
তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ

পরিবেশের ওপর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদী, যেটির ব্যবহার কমাতে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে এবার পলিথিনের বিকল্প পলিব্যাগ তৈরি করছে পোশাক খাতের পরিবেশবান্ধব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশি পোশাকের আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতকারক ইন্ডেট গ্রুপ । প্রতিষ্ঠানটি পোশাক খাতের জন্য এরই মধ্যে তৈরি করেছে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ।

তিন ধরনের পোশাক পলিব্যাগ রয়েছে- কম্পোস্টেবল, বায়োডিগ্রেডেবল এবং রিসাইকেবল; যেগুলো যথাক্রমে টিউভ অস্ট্রিয়া, গ্রিন এইএএফ এবং গ্লোবাল রিসাইকেল স্ট্যান্ডার্ডস (জিআরএস) কর্তৃক প্রত্যয়িত হয়েছে।

২০২০ সাল থেকে কম্পোস্টেবল এবং বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ তৈরি করছে ইন্ডেট গ্রুপ। এসব ব্যাগ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পোশাক প্রস্তুতকারক ও ক্রেতাদের মাঝে।

কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল শাহরিয়ার আহমেদ দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ ব্যাকটেরিয়া এবং জীব দ্বারা নিঃশ্বেষ হয়ে যেতে পারে। কম্পোস্টেবল ব্যাগ প্রাকৃতিক উদ্ভিদের স্টার্চ দিয়ে তৈরি এবং কোনো বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে না।”

তিনি আরও বলেন, “কম্পোস্টেবল ব্যাগ কম্পোস্ট তৈরি করতে জীবাণুর সাহায্যে একটি কম্পোস্টিং সিস্টেমে সহজেই বিলীন হয়ে যায়।”

প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় ১০ কোটি পিস ইকো-বান্ধব পলিব্যাগ তৈরি করে, যা পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করে। সাধারণ পলিব্যাগের তুলনায় এটি অনেক লাভজনকও বটে।

শাহরিয়ার বলেন, “বাংলাদেশ সবুজ পোশাকের জন্য একটি রোল মডেল এবং আমরা কাপড়ের জন্য পলিব্যাগ বা প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করছি। প্রথমে আমি একটি টেকসই উপায় বের করার পরিকল্পনা নেই, সেই মতে পরবর্তীতে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে যাই।”

তিনি বলেন, “এ পলিব্যাগের এখন এতোটাই চাহিদা যে, ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।”

এ নির্মাতা জানান, বর্তমানে তিনি পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, তিউনিসিয়া, মরক্কোসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করছেন।

তার সাফল্যের পরে, আরও কিছু কোম্পানি টেকসই পলিব্যাগ তৈরি শুরু করে।

এ খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, বায়োডিগ্রেডেবল কাঁচামাল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে এবং কম্পোস্টেবল উপাদান ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করা হয়। বর্জ্য শাকসবজি থেকে তৈরি কাঁচামাল।

নিজরে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আল শারিয়ার বলেন, একটি টেকসই পলিব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা বেশ ব্যয়বহুল। এছাড়া উৎপাদনে যাওয়ার আগে উদ্যোক্তাদের কিছু মানদণ্ড মেনে চলতে হয়।

তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমাকে কিছু নমুনা তৈরি করতে হয়েছিল এবং সেগুলো সার্টিফিকেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়েছিল। তারপরে তারা তাদের ল্যাবে এটি পরীক্ষা করে এবং সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়।

“কিন্তু পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিব্যাগ উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ” বলেও উল্লেখ করেন শাহরিয়ার।

সূত্র জানায়, সরবরাহকারীরা বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যবহৃত পলিব্যাগ সংগ্রহ করে, মূলত আবর্জনা বাছাইকারীদের কাছ থেকে। এছাড়া কিছু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও ব্যবহৃত পলিব্যাগ সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং কোম্পানিতে সরবরাহ করেন।

আল শারিয়ার ব্যাখ্যা করেব, কম্পোস্ট পলিব্যাগের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি এবং বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগের জন্য সাধারণ পলিব্যাগের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিব্যাগের দাম সাধারণ পলিব্যাগের চেয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ বেশি।

শাহরিয়ার বলেন, “আমরা সাধারণ পলিব্যাগের একই দামে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পলিব্যাগ সরবরাহ করতে সক্ষম, যদি ক্রেতারা বেশি পরিমাণে অর্ডার দেয়।”