প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নতির পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ অক্টোবর ২০২১ ১২:২৫:১৫ | আপডেট: ৩ years আগে
দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নতির পথে

দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত প্রথম ‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স)’ প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। জানা যায়, এখন থেকে প্রতি বছর এটি প্রকাশ করা হবে।

দেশের আটটি বিভাগ জুড়ে এক হাজারেরও বেশি সংস্থার উপর পরিচালিত জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে এই সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স তৈরিতে ১০টি মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি স্তম্ভ হচ্ছে- অবকাঠামো, ব্যবসা শুরু করা, শ্রম বিধি-বিধান এবং কর পরিশোধ। মোট ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে তৈরি সূচকে ব্যবসার পরিবেশকে এই চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো তৈরি করা ব্যবসার পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬১।

অবকাঠামোতে পেয়েছে ৭২.০২, ব্যবসা শুরু করার জন্য ৬৮.৯১, কর প্রদানের ক্ষেত্রে ৬৮.৭২ এবং শ্রম বিধি-বিধানের জন্য পেয়েছে ৬৬.৩৫।

পিইবি'র চেয়ারম্যান এম মাশরুর রেজা বলেন, আমাদের উন্নয়ন এটাই প্রমাণ করে যে, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের বিপুল অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, সেই সাথে আমরা মধ্যম আয়ের ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছি। উন্নয়নের ভিত শক্ত হয়েছে।

সূচকের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, যে একটি অসমাপ্ত পলিসি এজেন্ডা রয়েছে। বিশেষ করে বাণিজ্য সুবিধা, অর্থ বাধা এবং প্রযুক্তি গ্রহণের সুবিধার ক্ষেত্রে যা ছোট এবং বড় উভয় ব্যবসার সম্প্রসারণকে আরও বাধাগ্রস্থ করছে।

এতে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তাদের জন্য চলমান ভিত্তিতে ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজ করার জন্য নিয়ন্ত্রক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন আরও বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, যখন বিশ্বব্যাংক ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স বন্ধ করে দেয় তখন এমসিসিআইয়ের বিজনেস ইনডেক্স একটি সময়োপযোগী। এটি বিশ্বাসযোগ্য এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনের ফলাফলগুলো আকর্ষণীয় এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের বর্তমান অবস্থা প্রতিফলিত করে।

এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, অনেক ব্যবসার সূচকে তথ্যের অভাবে বাংলাদেশের কর্মক্ষমতা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ ভালো পারফর্ম করেছে। আমরা প্রতিবেদনে সমস্ত অগ্রগতি এবং ডেটা অন্তর্ভুক্ত করেছি। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বলেন, অবকাঠামো, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জাপান মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছে। এই প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অনেক এলাকা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। বিবিএক্স ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন উদ্ভাবনী বার্তা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলো দেশের উন্নয়নে আরও সহায়তা করবে।

তিনি আরো বলেন, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য আমাদের একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ। চীন, মালয়েশিয়া, ভারত এবং অনেক দেশ এই সূচক প্রকাশ করেছে। এটি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আকৃষ্ট করবে।

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, ব্যবসা করার সহজতার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো জানা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী তুলনা থাকলে বিবিএক্স আরো কার্যকর হতো।

তিনি আশা করেন, নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য উদ্যোগ নেবেন।

প্রতিবন্ধকতা:

অন্যান্য বেশ কয়েকটি সেক্টরের ফার্মের তুলনায় আরএমজি সেক্টরে জমি পাওয়া সবচেয়ে কঠিন বলে মনে করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নগরায়ন বেসরকারি খাতের জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।অনেক সম্ভাব্য উদ্যোক্তাকে এই দুটি প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধার মুখে পড়তে হয়।

অর্থের সীমাবদ্ধতা বিভিন্ন সেক্টরে বিস্তৃত, কিন্তু দ্রুত গতিশীল ভোক্তা খাতের পাশাপাশি রিয়েল এস্টেটকে সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাবিত করে। ফার্মাসিউটিক্যাল এবং নির্মাণ খাত অন্যান্য খাতের তুলনায় অর্থায়নে প্রবেশাধিকার লাভ করা তুলনামূলকভাবে সহজ বলে মনে করা হয়।

অন্যদিকে, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা পরিবহন, স্টোরেজ এবং রপ্তানিমুখী সেক্টরগুলোর জন্য সবচেয়ে সমস্যাযুক্ত বলে মনে করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, কাগজপত্র এবং নথিপত্রের বোঝা।

বিক্রয় পদ্ধতির ডিজিটাইজেশনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার সাথে খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক এবং দেশীয় বাজারে টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য সংগ্রাম করে।

বিতর্ককে কেন্দ্র করে সংবেদনশীল আইনি সমস্যাগুলো বেশ কয়েকটি সেক্টরের জন্য সমস্যাযুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত পণ্য। যেমন কৃষি এবং ফার্মাসিউটিক্যালস।

প্রতিবেদনের মূল বিষয়:

কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও ব্যবসার পরিবেশকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ করার জন্য উন্নয়ন এবং সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।

এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ব্যবসা সহজ করার জন্য নীতি নির্ধারকদের নিয়ন্ত্রক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আনা উচিত। নিয়ন্ত্রক বোঝা এবং রাজস্ব আদায়েরও সংস্কার প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফলাফল নির্দেশ করে ঢাকার বিনিয়োগ বৃদ্ধির জলবায়ু সুবিধা প্রাথমিক বৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে এবং চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক ও শিল্প কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা। সেইসাথে দেশের ঐতিহ্যগতভাবে অবহেলিত অংশগুলোর সম্ভাবনাও তুলে ধরা হয়েছে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট রূপালী চৌধুরী বলেন, আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অফিসে যাই। কিন্তু ছোট স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি বাংলাদেশের রেটিং পরিবর্তন করে দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের সূচক প্রকাশ বন্ধ করার ঘোষণা সত্ত্বেও বিআইডিএ দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আশ্বস্ত করেছি যে এমসিসিআই এবং পিইবির উদ্যোগ বিডা কার্যক্রমকে আরো বেগবান করবে।