পর্যাপ্ত মজুদেও দেশের বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে পেঁয়াজ-রসুন ও আদার দাম। গত ২০ দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে গত তিন দিনেই পেঁয়াজর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা। পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আদা, রসুন ও শুকনা মরিচসহ মসলা জাতীয় পণ্যের দাম।
গত এক সপ্তাহে আদার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা আর রসুনে বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা। ক্রমাগত পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আদা ও রসুন আগে থেকেই আমদানি হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাজারেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। শনিবার থেকেই এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। অথচ গত বুধবারও পেঁয়াজের কেজি ছিল সর্বোচ্চ ৬০-৬৫ টাকা। গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। ওই সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি। অর্থাৎ গত ১৫-২০ দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে।
বাজারে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কেজি, এর মধ্যে আমদানির রসুনের দামই সবচেয়ে বেশি। এক সপ্তাহ আগে সবধরণের দাম ছিল প্রতিকেজি ১৩০-১৫০ টাকা। এক মাস আগে রসুন পাওয়া যেত ১০০-১৬০ টাকা কেজিতে।
আদার দাম বেড়ে আবার ৩৫০ টাকায় ওঠেছে।
এর আগে করোনার সময় আদার ব্যপক চাহিদার কারণে দাম বেড়ে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তারপর গত দুই বছর ২৫০ টাকার মধ্যেই ছিল।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি, আর আমদানির চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে আদা বিক্রি হয়েছে ২০০-৩০০ টাকা কেজি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র হিসাবে বর্তমানে আদাম বিক্রি হচ্ছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আদার দাম বেড়েছে ১৬৩-১৭৫ শতাংশ, রসুনের দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশ ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭৮ শতাংশের বেশি দামে। পেঁয়াজের দাম সর্বশেষ আরেক দফা বেড়েছে গত শনিবার, আদার দাম সর্বশেষ বেড়েছে গত বৃহস্পতিবার ও রসুনের দাম বেড়েছে রোববার।
সেগুনবাগচিার বিক্রেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আদা রসুন ও পেঁয়াজের দাম প্রতিদিনই কিছু না কিছু বাড়ছে। পাইকারি বাজারে গিয়ে গিয়ে আগের দিনের দামে এসব পণ্য পাওয়া যায় না। বিশেষ করে চায়না আদা ও রসুনের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী ঈদে কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি আমরাও।’
এমন পরিস্থিতিতে শীঘ্রই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। তিনি বলেন, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। আর বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন।
উৎপাদন ও মজুদ বিবেচনায় দেশে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই; অথচ বাজারে দাম কিছুটা বেশি। কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের অভ্যন্তরে পেঁয়াজের বাজার সবসময় মনিটর করছে। দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকলে শীঘ্রই পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
রোববার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত সভায় কৃষিসচিব এসব কথা বলেন।
এসময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, কৃষি বিপণণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: মাসুদ করিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮-৩০ টাকা। গতবছর ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি উন্মুক্ত থাকার কারণে আমদানি বেশি হয়েছিল। দেশি পেঁয়াজের বাজারদর কম ছিল ৩০- ৩৫ টাকা ছিল। কৃষকেরা কম দাম পেয়েছিল। সেজন্য, পেঁয়াজ চাষে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখতে এবছর পেঁয়াজ আমদানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এতে গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনেরও বেশি।