প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

প্রণোদনা পেতে ঘুষের শিকার ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী: সানেম

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ আগস্ট ২০২১ ১৫:১৭:৪৭ | আপডেট: ৩ years আগে
প্রণোদনা পেতে ঘুষের শিকার ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী: সানেম

করোনা মহামারি সংকট কাটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করে বাংলাদেশ। সরকার ঘোষিত এই প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন যথাযথ হয়নি বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম)।

এই গবেষণা সংস্থার সর্বশেষ জরিপের তথ্য মতে, এখনও ৭৯ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি। এর মধ্যে প্যাকেজের টাকা দিতে কারও কারও কাছে ঘুষও চাওয়া হয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী ঘুষ চাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া মৌনতা প্রকাশ করেছেন ৪৭ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ ব্যবসায়ী ঘুষ চাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

সানেমের ‘কোভিড-১৯ এবং বাংলাদেশে ব্যবসায় আস্থা’ শীর্ষক জরিপের ৫ম ধাপের ফলাফলে এসব তথ্যে উঠে এসেছে।

এপ্রিল থেকে জুনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত জুলাইয়ে ৫০১টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়।

শনিবার সকালে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরিপের এই ফল প্রকাশ করা হয়। দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন এই জরিপে সহায়তা করেছে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা না পাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো টাকা পায়নি। আর ১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেন না। প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে বাকি ২১ শতাংশর প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ পাওয়ার কথা বলেছে।

তবে সবচেয়ে কম পেয়েছে পাইকারী ব্যবসায়ী ৩ শতাংশ, আইসিটি ৪ শতাংশ, রেস্টুরেন্ট ৬ শতাংশ, আবাসন ৭ শতাংশ, পরিবহন ৮ শতাংশ ও খুচরা ব্যবাসায়ী ৯ শতাংশ পেয়েছে। বড়দের তুলনায় ছোট প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা কম পাচ্ছে।

প্রণোদনা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। আর মাঝারি ২৪ শতাংশ ও বড় ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে সানেম বলেছে, প্রণোদনা প্রাকেজ পাওয়া দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার কথা বলছে ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের মাধ্যমে এ সেবা পাওয়া কঠিন বলছে ৭২ শতাংশ, ৫০ শতাংশ প্রক্রিয়ায় জটিলতার কথা বলছে।

এছাড়া ৩৬ শতাংশ মনে করে প্রণোদনার অর্থ যথেষ্ট নয়। ২৯ শতাংশ বলছে প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা দিতে ঘুষ চাওয়া হয়েছে।

সানেম জানায়, যারা ঘুষের কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশ এসএমই, ৪৩ শতাংশ মাঝারি ও ১৯ শতাংশ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঘুষ চাওয়ার কথা বলছেন তাদের মধ্যে এই কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি ৭৬ শতাংশ।

করোনা টিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ৬০ শতাংশ মালিক জানিয়েছেন, তাঁরা কমপক্ষে এক ডোজ টিকা নিয়ে ফেলেছেন। আর কর্মীদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ২৫ শতাংশ টিকা পেয়েছেন। ৭৫ শতাংশ কর্মী টিকার একটি ডোজও পাননি। তৈরি পোশাক খাতের কর্মীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ নূন্যতম এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। অর্ধেকের বেশি টিকা পেয়েছে আথিক খাত ও ওষুধ শিল্পে।

অন্যান্য খাতে ৩০ শতাংশের নিচে রয়েছে। বৃহৎ ও মঝারি শিল্পে টিকা বেশি পেলেও এসএমইতে টিকা কম পেয়েছে। আর ঢাকার বাইরে কারখানার কর্মকর্তারা কম টিকা পেয়েছেন। রপ্তানিমুখী কারখানার চেয়ে স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করা শিল্পের কর্মীরা কম টিকা পেয়েছেন।

সানেম বলছে, এপ্রিল-জুন মাসে কোভিড পরিস্থিতি আগের প্রান্তিকের তুলনায় খারাপ ছিল। এই প্রান্তিকে ব্যবসায়ীদের আস্থা কমে মাত্র ৪১.৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে। জুলাই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেড়ে ৪৯.৭৪ শতাংশ হবে। তবে আগের প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তা ছিল প্রায় ৫৮ শতাংশ।

৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দুর্বল। ২৭ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, মোটামুটি মানের পুনরুদ্ধার হচ্ছে। আর ৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে, পুনরুদ্ধারের ধরন শক্তিশালী।

আগের প্রান্তিকের জরিপে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দুর্বল পুনরুদ্ধার ৬৭ শতাংশ, মোটামুটি ৩১ শতাংশ ও শক্তিশালী পুনরুদ্ধার ২ শতাংশ বলেছিল।

এখনও ৭৩ শতাংশ এসএমই মনে করেন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দুর্বল।

চলতি প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টম্বর) তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া, ওষুধ, খাদ্য, রেস্টুরেন্ট ও আথিক খাত ভালো করার কথা বলছে। তবে হালকা প্রকৌশল, পাইকারী, খুচরা, পরিবহন, আইসিটি, আবাসনসহ অন্যান্য সেবা ও উৎপাদন খাত এখনও পিছিয়ে আছে।

৭৬ শতাংশ মনে করেন করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বৈদেশিক রেমিট্যান্স শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। পণ্য ও সেবা রপ্তানি ৬৯ শতাংশ, ভ্যাকসিনেশন প্রগ্রাম ৬৫ শতাংশ, বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণ ৬১ শতাংশ।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি খুবই ধীর। গত এপ্রিল ও জুন প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের চেয়ে অবনতি হয়েছে। তবে গত বছরের একই প্রান্তিকে করোনার বিপর্যয় ছিল। এ কারণে গত বছরের তুলনায় উন্নতি আছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের করোনা সংকট শিগগিরই শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই নতুন এই পরিস্থির সঙ্গে সমন্বয় করে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ঠিক করতে হবে। ঢাকার জন্য যে ধরনের লকডাউন প্রযোজ্য হবে, রংপুরে সে ধরনের লকডাউন প্রযোজ্য নয়। আবার তৈরি পোশাক খাতের জন্য এক ধরণের কৌশল লাগবে, অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয়তো প্রযোজ্য হবে না।

এজন্য সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কৌশল ঠিক করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

রায়হান বলেন, সরকারের দুটি পদক্ষেপের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। একটি টিকা এবং অন্যটি উদ্দীপনা প্যাকেজ।

তিনি আরও বলেন, এখনও ৭০ শতাংশের বেশি শ্রমিক ভ্যাকসিন পায়নি। এটা আরও বেশি কার্যকর করা দরকার। দ্বিতীয়ত প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ কার্যকর হয়নি। এটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার।