আরিফুর রহমান তুহিন
বাংলাদেশে তুলা ও সুতা রপ্তানির দিক থেকে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ভারত। একই সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্য আর সীমিত পরিবহন খরচের কারণে প্রতিবেশী এ দেশ থেকে পণ্য আমদানিতেও ক্রমবর্ধমান আধিপত্য রয়েছে দেশটির।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের (ইউএসডিএ) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে জুলাই ২০২১ পর্যন্ত তুলা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত ৩২ শতাংশ বাজার ধরে রেখেছে, যা আগের বছর ছিল ২৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১.১৮ বিলিয়ন ডলারের সুতা আমদানি করেছে বাংলাদেশ, আর মোট আমদানি প্রায় ১,৪২ বিলিয়ন ডলারের।
ইউএসডিএ এর তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে, এর আগের বছরের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় তুলার সুতা আমদানির মূল্য ১২ শতাংশের বেশি বেড়ে ৬৯২ মিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। যেখানে চীন একাই ওই বছরে বাংলাদেশে ১৪৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি সুতা রপ্তানি করেছে এবং ২০১৯ সালে রপ্তানি করেছে ২২৫ মিলিয়নেরও বেশি।
যদিও, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ৪৩৩টিরও বেশি স্পিনিং মিল ছিল, যা প্রতি বছর ২.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন সুতা উৎপাদন করতে পারে। বড় দেশীয় স্পিনিং ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ২০১৯ সালে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সুতা আমদানি করেছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় বাজারে তুলা ও সুতার দাম ব্রাজিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক সস্তা, যে কারণেই তারা ভারতের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফজলি শামীম এহসান দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, আমরা ভারত থেকে তুলার সুতা আমদানি করেছি এর সহজলভ্যতা এবং কম পরিবহন খরচের কারণে। তার অভিযোগ, স্থলবন্দর এখনও ব্যবসাবান্ধব নয়।
তিনি বলেন, এটি সত্য যে, তুলা আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করে থাকি।
২০২১ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক থেকে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রমবর্ধমান অর্ডার পাওয়া শুরু করেছে। কারণ, করোনার পর তাদের অর্থনীতি আরও সচল হয়েছে। তাই ভালো পরিমাণ রপ্তানি অর্ডারের বিপরীতে কাপড় তৈরিতে বাংলাদেশের তুলার চাহিদা বেড়েছে।
২০২১ সালের প্রথম ১০ মাসে ২৮ শতাংশ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮.৫ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে আমাদের কাজের অর্ডার বেশ ভালো এবং ক্রেতারা ভালো দামও দিচ্ছেন।
ইউএসডিএ বলছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ২০২১-২২ বিপণন বছরে (আগস্ট-জুলাই) প্রায় ৮.৮১ মিলিয়ন বেল তুলা ব্যবহার করবে, যা ২০১০-২১ অর্থবছরে ছিল ৮.৫১ মিলিয়ন বেল।
একই সময়ে দেশীয় উৎস থেকে প্রায় ১৫১ হাজার বেল তুলা উৎপাদিত হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের মতে, ৭০.৭৪ শতাংশ পোশাক তৈরি হয় তুলা দিয়ে।
ইউএসডিএ-এর আনুষ্ঠানিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিপণন বছর ২০২১-২২ এ বাংলাদেশকে ৮.২ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করতে হবে। বেশ ভালো রপ্তানি আয়ের কারণে চাহিদা বাড়বে ১.২ শতাংশ।
২০২১ সালে দেশীয় শিল্পের উচ্চ সুতার চাহিদার কারণে কাঁচা তুলা আমদানি বেড়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, বাংলাদেশের তুলা আমদানি ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে।
বাড়ছে উৎপাদন খরচ
ইউএসডিএ-এর তথ্য বলছে, জ্বালানি তেলের দাম ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, কাঁচামাল পরিবহন এবং পরিষেবার খরচ বেড়েছে।
অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী তুলার দামও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, প্রতি কিলোগ্রাম ৩০-গণনা তুলার সুতা ৪.৭ ডলার থেকে ৪.৮ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা করোনার আগের সময়ে ছিল ২.২৫ ডলার থেকে ২.৩০ ডলার।
ইউএসডিএ-এর প্রতিবেদন অনুসারে, কনটেইনার ভাড়াও ৩৫০ থেকে ৫০০ শতাংশ বেড়েছে, রঞ্জক-রাসায়নিক খরচ ৪ শতাংশ, মজুরি ৭.৫ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে, যা কাপড়ের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়েছে।