প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অযৌক্তিক দাম

রোকন উদ্দিন
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:৩৩:৩৬ | আপডেট: ২ years আগে
বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অযৌক্তিক দাম

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ জীবন যাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কৃষি পণ্য। কৃষি বিপনণ অধিদপ্তর প্রতিদিন চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, মরিচ ও কিছু সবজিসহ ৩৯টি পণ্যের পাইকারি ও খুচরায় যৌক্তিক দাম তুলে ধরে।

রোববার এই পণ্যগুলোর মধ্যে ডিম, মুরগি ও সয়াবিন তেলসহ ৩-৪টি ছাড়া বাকি সব পণ্যই যৌক্তিক দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে। খোদ সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) একই কথা বলছে।

টিসিবির হিসাবে কোন কোন পণ্য কেজিপ্রতি ৮-১২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে যৌক্তিক দামের চেয়ে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশে স্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এই বাড়তি দামের উপর আরো বেশি মূল্যে পণ্য কিনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সাধারণ ক্রেতার।
ভোক্তাদের অভিযোগ বাজারে সঠিক তদারকি নেই বলে দামের এই নৈরাজ্য চলছে।

তবে কৃষি বিপনণ বলছে, তাদের তৈরি এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সতর্ক করা হচ্ছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে রোববার পাইকারি পাইকারি বাজারগুলোতে মোটা চাল গুটি-স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৫.৪০ টাকা কেজি। রাজধানীর বাবুবাজার, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি পাইকারি বাজারের তথ্য তুলে ধরে অধিদপ্তর বলছে, সে হিসেবে খুচরা বিক্রেতার ২.৬-৩ টাকা প্রফিট মার্জিন রেখে মোটা যৌক্তিক দাম দাঁড়ায় ৪৮ টাকা কেজি। কিন্তু বাস্তবে যৌক্তিক এই দামে মোটা চাল পাওয়া যায়নি কোন বাজারে।

খোদ সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউনহলসহ পাঁচ থেকে ছয়টি বাজারে তথ্য সংগ্রহ করে বলছে, রোববার খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ ভোক্তাদের যৌক্তিক দামের চেয়ে ২-৫ টাকা বেশি দিয়ে প্রতিকেজি চাল কিনতে হয়েছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, কৃষি বিপনণ অধিদপ্তর যে দাম বলছে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের বাজার তার নিজস্ব গতিতে চলছে না। বাজারকে ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের দেশে কোন পণ্যে কত লাভ করতে পারবে তা নির্ধারণ করা নেই। ফলে যে যেভাবে পারছে মূল্য বাড়াচ্ছে এবং দাম রাখছে।

সরকারের উচিৎ কেন তারা অযৌক্তিক দামে বিক্রি করছে তা খতিয়ে দেখা। প্রতিটি পণ্য সাপ্লাইচেইনের কোন স্তরে কত বিক্রি হচ্ছে, উৎপাদক, পাইকার, সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতা কে কত মুনাফা করছে তার সঠিক তথ্য রাখা রাখা উচিৎ। ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির যে যুক্তিগুলো দেখায় তার সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া। সর্বোপরি কঠোরভাবে বাজারমনিটরিং করা উচিৎ। এগুলো সরকারের দায়ীত্বশীল সংস্থাগুলোর যৌক্তিক কাজ। সরকার তার যৌক্তিক কাজগুলো করলে ব্যবসায়ীরাও যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

কৃষি বিপনণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, রোববার পাইকারি বাজারে মাঝারি চাল বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে। এই মানের চালের খুচরার যৌক্তিক মূল্য হবে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। তবে খুচরায় কেজি প্রতি ৩ টাকা বেশি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৫.৬০ টাকা কেজি দরে, খুচরায় যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে রোববার খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৪৭-৫২ টাকা কেজি।

খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৪-১৬ টাকা বেশি দামে। কেজি প্রতি সাদা খোলা চিনি ৭৪ টাকা যৌক্তিক মূল্য বলা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাকা কেজি। মোটা মশুর ডালের দাম বাড়তি রাখছেন ৮-১২ টাকা প্রতিকেজিতে। পেঁয়াজে বাড়তি দাম কেজিপ্রতি ৬-৮ টাকা ও আলুতে ৪-৫ টাকা।

এ বিষয়ে কৃষি বিপণনের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ) মো. মজিবর রহমান বলেন, আমরা যৌক্তিক দামের তথ্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাই। এর ভিত্তিতে তারা প্রতিদিন বাজার অভিযান পরিচালনা করে। কেই অযৌক্তিক দাম রাখলে তাকে সতর্ক করা হয় বা শাস্তি দেয়া হয়।’

তবে ব্যতিক্রম ফার্মের মুরগি ও মুরগির ডিমের দাম। খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন পাইকারি যৌক্তিক দামের চেয়েও কমে। ডিমের যৌক্তিক দাম ৩৯-৪২ টাকা হালি, বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা হালি। ব্রয়লার মুরগি কেনা যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা কমে।

জানতে চাইলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের আল্লাহর দান স্টোর নামের একটি মুদি দোকানদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি সর্বশেষ পাইকারি বাজার থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনেছি ৪২৫০ টাকায়। অর্থাৎ ৮৫ টাকা কেজি দরে। এছাড়া পরিবহন ভাড়া, দোকান ভাড়া ও প্রফিট মার্জিনসহ ৯০ টাকার কম বিক্রি করলে আমার লোকসান। কৃষি বিপনণ কিভাবে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে আমার জানা নেই। আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হয় তাই বিক্রিও বাড়তি দামে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে ‘পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে’ সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ, গত বছরের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর জুলাই মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৪৮ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।