ঢাকার পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৭তম আসরের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। এখন বসানো হচ্ছে স্টল। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব মোঃ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, সব স্টলের অভ্যন্তরীণ নকশা শীঘ্রই সম্পন্ন হবে এবং আগামী ১ জানুয়ারি বিবিসিএফইসি প্রাঙ্গণে মেলা শুরু হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। “মাসব্যাপী এই মেলায় প্রায় ৩৩০টি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শক তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান এবং থাইল্যান্ড সহ ১১টি দেশের প্রায় ১৪টি বিদেশী প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশ নেবে।”
ইফতেখার বলেন, “মেলা উদ্বোধনের আগে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। এ বছর ডলার ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও মেলায় অংশ নিতে পারছেন না।
বাণিজ্য মেলায় নিম্নমানের পণ্য
এর আগে বাণিজ্য মেলায় নিম্নমানের পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেক দর্শনার্থী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছেন।
দ্য বিজনেস পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে ইপিবি সচিব বলেন, তারা মেলায় ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে সমান সুযোগ দিতে চান; যাতে গ্রাহকরা মেলায় বিভিন্ন অপশন থেকে কী ধরনের পণ্য কিনবেন তা বেছে নিতে পারেন।
তিনি বলেন; “আমরা গ্রাহকদের কাছে সমস্ত পণ্য উপস্থাপন করতে চাই। সব ছোট-বড় ব্যবসায়ী মেলায় তাদের পণ্য প্রদর্শন করতে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মেলার মাঠ পরিদর্শন করবেন এবং যারা নকল পণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য মেলা
মাসব্যাপী ডিআইটিএফ চলাকালীন তীব্র যানজট এড়াতে এবং মেলাকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য, সরকার মেলার স্থল শেরেবাংলা নগর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তর করেছে। ২৬ একর জমির উপর যেখানে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএসসিইসি) প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।
বিবিসিএফইসি’র ৩৩ হাজার বর্গমিটার জায়গা রয়েছে। ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার জুড়ে দুটি প্রদর্শনী হল রয়েছে, যেখানে ৮০০ টিরও বেশি স্টল বসানোর সুবিধা রয়েছে।
তবে বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক মান পুরোপুরি ধরে রাখতে পারছেন না বলে স্বীকার করেছেন ইপিবি সচিব। ইফতেখার বলেন, “বাণিজ্য মেলার ভেন্যুতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় স্বাদের মিশ্রণ পাওয়া যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য আমরা ২০-২২টি দেশে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ করি।”
রপ্তানি আদেশ গ্রহণ
যদিও মেলার ২৬তম আসরে ২৫তম আসরের তুলনায় কম রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে, তথাপি ইপিবি এ বছর বেশি রপ্তানি আদেশ আশা করছে।
গত বছর ২৬ তম ডিআইটিএফ-এ, দেশের বৃহত্তম বার্ষিক বাণিজ্য অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ১৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি আদেশ পেয়েছে। শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত ২৫ তম আসরে, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আদেশে পেয়েছে।
দর্শনার্থীদের জন্য সহজ যাতায়াত
গত বছর ৩০০ ফুট সড়ক নির্মাণাধীন থাকায় মেলায় যেতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। কিন্তু চলতি বছরেই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তাই যাত্রীরা সহজেই মেলাস্থলে যেতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ইপিবি সচিব।
তিনি বলেন, আয়োজকরা ধুলাবালি থেকে যাত্রীদের মুক্তি দিতে পানি স্প্রে করবে। “পাশাপাশি, এ বছরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। করোনার কারণে আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া পাইনি। আশা করছি, সব কিছু ঠিক থাকায় আমরা এ বছর ব্যাপক সাড়া পাব।”
দ্য বিজনেস পোস্টের সাথে আলাপকালে ইজমা ব্র্যান্ডের স্বত্বাধিকারী কে এম শরিয়াতুল্লাহ বলেন, তারা ব্যাগ, টেবিলওয়্যার এবং টিস্যু বক্স সহ প্রায় ১০০ ধরনের পাটের তৈরি পণ্য প্রদর্শন করবেন।
“আমি মেলার পাট বহুমুখীকরণ প্রচার কেন্দ্রে আট ফুট বাই আট ফুটের একটি স্টল বুক করেছি ৬৫ হাজার টাকায়। যেখানে ১৬ জন উদ্যোক্তা পাটজাত পণ্য প্রদর্শন করবেন। এখন আমরা দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত।”
শরিয়াতুল্লাহ আশংকা করছেন ৩০০ ফুট রোডের কাঞ্চন ব্রিজ পয়েন্টের কাজ এখনও সম্পূর্ণ না হওয়ায় সবার জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
শেরেবাংলা নগর থেকে পূর্বাচল এলাকা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইপিবি ১৯৯৫ সাল থেকে ডিআইটিএফ সংগঠিত করে আসছে। ২৫ তম আসর পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরে ডিআইটিএফ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী এবং দর্শনার্থীদের জন্য জায়গাটি খুব ছোট ছিল।
এরই প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য মেলাকে পূর্বাচল এলাকায় আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তরিত করে তার স্থায়ী ভেন্যুতে।
অনুষ্ঠানস্থল আগারগাঁও থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তরের পর ভার্চুয়ালি ২৬তম আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ বছর তিনি সরাসরি উপস্থিত হয়ে মেলার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।