প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

বাল্বের বাজারের ৬০ শতাংশই এলইডি

২২ নভেম্বর ২০২১ ১৬:২১:১২ | আপডেট: ৩ years আগে
বাল্বের বাজারের ৬০ শতাংশই এলইডি

মোহাম্মদ আইয়ুব আলী

এলইডি লাইট বাল্ব শিল্পের বাজার দেশে ব্যাপকভাব বাড়ছে। বছরে এর বৃদ্ধি হার ২৫ শতাংশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সব লাইটই হবে এলইডিভিত্তিক।

এলইডি ল্যাম্প অথবা এলইডি লাইট বাল্ব হলো বৈদ্যুতিক লাইট, যা লাইট-এমিটিং ডায়োড (এলইডি) ব্যবহার করে আলো তৈরি করে। এলইডি ল্যাম্পগুলো এর সমমানের অন্য লাইটের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি আলো দেয়, এসব লাইট শক্তিশালীও বটে।

বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায় সবচেয়ে কার্যকর এলইডি ল্যাম্পগুলোর কার্যক্ষমতা প্রতি ওয়াট ২০০ লুমেন (এলএম/ডব্লিউ)। বাণিজ্যিক এলইডি লাইটগুলোর আয়ুষ্কাল প্রথাগত লাইটগুলোর চেয়ে বহুগুণ বেশি।

বাংলাদেশের “লাইট শিল্পে উদীয়মান এলইডি পণ্যের বিপণন কৌশল” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালে বাল্ব সেক্টরের বাজারের ২৯ শতাংশ দখলে রয়েছে এলইডি লাইটের, যা এখন প্রায় ৬০ শতাংশ।

এ শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের এলইডি বাল্বের বাজার ৬০ শতাংশেরও বেশি, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮-৯ কোটি ইউনিট বৈদ্যুতিক বাল্বের বিপুল চাহিদা রয়েছে।

এ খাতের নেতাদের মতে, বর্তমানে এলইডি লাইটের বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর আধিপত্য রয়েছে, বাকি ৪০ শতাংশ নন-ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো দখলে করেছে।

ব্র্যান্ডেড কোম্পানিগুলো হলো- সুপার স্টার গ্রুপের সুপার স্টার, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের ট্রান্সটেক, ওয়ালটনের ওয়ালটন এলইডি বাল্ব, এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের এনার্জিপ্যাক, প্রাণ আরএফএলের ক্লিক এবং এসিআই ইলেক্ট্রিক্যালের স্পার্কল, এসকিউ এবং হোসাফ।

এছাড়াও, বাজারে পাশা, ওসাকা, স্পিড, হি, ম্যাজিক এবং কসমোর মতো আরও অনেক নন-ব্র্যান্ডেড কোম্পানি রয়েছে।

দ্য বিজনেস পোস্ট-এর সাথে আলাপকালে, সুপার স্টার গ্রুপের এজিএম (মার্কেটিং) মো: সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, সুপার স্টার সারা দেশে এলইডি লাইট সেক্টরের বাজারের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ, আমাদের কোম্পানি মোট মার্কেটের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের উপরে দখল করতে পেরেছে। বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ১৮ থেকে ২০ শতাংশ।

এখন ৮০ শতাংশ লাইট এলইডি, যদিও শুধুমাত্র বস্তি এলাকা আর কিছু দোকান এখনও প্রচলিত লাইট এবং সিএফএল লাইট ব্যবহার করছে বলেও উল্লেখ করে তিনি।

সুপার স্টার গ্রুপের সিনিয়র ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ (মার্কেটিং অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) মো: বায়েজিদ কামাল বলেন, “আমাদের শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এবং গ্রাহকবান্ধব পরিষেবার কারণে আমাদের গ্রাহক মেট্রোপলিটন এলাকার চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় বেশি।”

দেশের এলইডি লাইট উৎপাদকদের মধ্যে আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব বিভাগ) মো: শাকিল চৌধুরী বলেন, আমাদের এলইডি বাল্ব ব্যবসার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। ২০২০ সালে ২২০ কোটি টাকার এলইডি লাইট বিক্রি করে বাজারের ২০ শতাংশ দখল করতে সক্ষম হয়েছে ট্রান্সকম।

জাপানের সানটেক কর্পোরেশন (২০০৯) অনুসারে, একটি এলইডি লাইট বাল্বের আয়ুষ্কাল ৪০ হাজার ঘণ্টা, যা ৮০ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।

ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) বিভাগ বলছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স এবং বৈদ্যুতিক পণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটন এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ-বান্ধব এলইডি লাইট তৈরি করছে, যা সাধারণ বাল্বের চেয়ে ৯০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।

ওয়ালটন ইলেক্ট্রনিকের চিফ বিজনেস অফিসার মো: সোহেল রানা বলেন, আমরা এখন বার্ষিক ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির সাথে প্রায় ১৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ধারণ করছি এবং এ বছর ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যের আয় বৃদ্ধি ১০৪.৮৬ শতাংশ।

তিনি বলেন, আমরা মহামারি চলাকালীনও ১৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের এলইডি লাইট বিক্রি করেছি।

প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামারুজ্জামান কামাল বলেন, এলইডি বাল্ব তৈরির বেশিরভাগ কাঁচামাল গত তিন-চার বছরে সম্পূর্ণ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

অবশ্য, প্রায় ২০ শতাংশ কাঁচামাল এখন দেশীয় উৎপাদকরা সরবরাহ করতে পারছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্লিক এবং ব্লেজ আমাদের জনপ্রিয় এলইডি পণ্য। কারণ, আমাদের বার্ষিক বৃদ্ধি ১৮-২০ শতাংশসহ বাজারের প্রায় ১০ শতাংশ ধরাণ করছে এই দুই পণ্য।

এনার্জিপ্যাক ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের পরিচালক মো: নুরুল আক্তার বলেন, এলইডি লাইট বাল্ব আধুনিক প্রযুক্তির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে চিহ্নিত, যা জিএলএস (সাধারণ আলো পরিষেবা) বা প্রচলিত আলো এবং সিএফএল (কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এটি একদিকে যেমন পরিবেশ বান্ধব, অন্যদিকে হালকা, যে কারণে দ্রুত গ্রাহকের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর লায়ন ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকের মালিক মো: ইব্রাহিম বলেন, গ্রাহকদের ব্যাপক চাহিদা, উন্নত মানের এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির কারণে আমি শুধুমাত্র সুপার স্টার এবং ট্রান্সটেক এলইডি লাইট বিক্রি করি।

এলইডি লাইটের ক্রেতা মাহাবুব আলী, যিনি কিছু লাইট কিনছেন রাজধানীর মগবাজার এলাকায় তার বাসভবনের জন্য। বলেন, আলো, ব্র্যান্ড নাম এবং খ্যাতির কারণে সুপার স্টার বা ট্রান্সটেক পছন্দ করেন তিনি।