মেহেদী হাসান
করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কায় অতিরিক্ত খরচ সামলাতে না পেরে কর্মী ছাঁটাই করেছে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক। শুধু তাই নয় অনেককে বাধ্য করা হয়েছে পদত্যাগ করতেও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, মহামারি চলাকালীন সময়ে কিছু ব্যাংক থেকে কর্মীদের চাকরিচ্যুত এবং জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করার অনেক রিপোর্ট পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি)।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে একটি তদন্ত পরিচালনা করবে। তবে মহামারির মধ্যে ঠিক কতজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়েদুর রহমানের নির্দেশে সোমবার ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে পরিদর্শন করতে এফআইসিএসডির একটি দল পাঠিয়েছে। এ সময় কর্মীদের কেন চাকরিচ্যুত ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্র্যাক ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস পোস্ট'কে জানান, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৫০ এর বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
তারা আরও জানান, গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটি থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়। চাকরি হারানোদের ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতার প্রমাণ না দিতে পারা, চুক্তি না বাড়ানো এবং চাকরির ধরনে পরিবর্তন এসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলোতে কর্মী ছাঁটাই এখন রুটিনের অংশ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ কর্মীকে কারণ হিসেবে দুর্বল দেখানো হয় বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর. এফ. হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, কাউকে ব্যাংক থেকে অব্যাহতি দেওয়া বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়নি। তবে কিছু কিছু কর্মী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চলে গেছেন। তবে কিছু কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট কারণ এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হয়।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার বলেন, আমরা কোনো কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে বলিনি এবং আমাদের ব্যাংক থেকে কেউ পদত্যাগও করেননি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নিয়মিত আমাদের ব্যাংকের কার্যক্রম পরিদর্শন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, ব্যাংকে কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, এর আগেও এমন অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ব্যাংক পরিদর্শন করে। ফলশ্রুতিতে অনেকই তাদের চাকরি ফিরে পায়।
একই অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও পরিদর্শন করে।
গত বছরের মার্চ মাসে দেশে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে এবি ব্যাংক এবং যমুনা ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক তাদের কিছু কর্মীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
সর্বশেষ, চলতি বছরের ২৫ জুলাই যমুনা ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, তাদের ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
চিঠিতে জানানো হয়, যমুনা ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ফোন করে তাদের পদত্যাগ করতে বলে।
ব্যাংকের একজন বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের মতো এমন জাতীয় সংকটের মধ্যে কর্মীদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা অমানবিক। যেখানে নতুনভাবে কোনো কাজের তেমন সুযোগও নেই।
গত বছর, এবি ব্যাংক তার ৮০ জনেরও বেশি কর্মীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।
এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংক থেকে অযোগ্য এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মহামারির এ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে চাকরিচ্যুত এবং জোরপূর্বক পদত্যাগ কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
মহামারির মধ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্যান্য খাতগুলোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তিনি।