আগামী মার্চে বাংলাদেশ-ভারত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সেপা) আলোচনার সচিব পর্ষায়ে বৈঠক হতে পারে ঢাকায়।
গত ডিসেম্বর মাসে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা নয়াদিল্লীতে সেপা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ার সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা চাচ্ছি সেপা চুক্তির প্রথম আলোচনা ঢাকাতেই হোক। ভারতীয়রা অবশ্য বলেছিল নয়াদিল্লীতে করতে। তবে আমরা বলেছি প্রথমে সচিব পর্ষায়ে বৈঠকটা মার্চে ঢাকাতেই হোক।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের চুক্তি করতে দীর্ষ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ দেশীয় বাজারে এর একটা সরাসরি প্রভাব রয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে নয়াদিল্লীতে মন্ত্রী পর্ষায়ের বৈঠক শেষে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়াতে ২০২৬ সালের আগেই সেপা করতে চায় বাংলাদেশ। এই পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তি বাস্তবায়নে আলোচনা শুরু করতে দিল্লিকে চিঠি পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ।
দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রস্তাবিত সেপা স্বাক্ষর হলে দুই দেশের বাণিজ্য কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এই চুক্তির লক্ষ্য বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়ানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে গেলে আমদানি-রপ্তানির প্রশ্ন আসবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসা সহজ করতে বন্দর ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, আলোচনা শুরু হলে প্রথমে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হবে। এতে পণ্য, সেবা এবং বিনিয়োগ এই তিনটি বিষয়ে আলোচনা হবে। এতে কিভাবে হবে, কয় বছরে হবে, কী কী পণ্য থাকবে। রুল অব অরিজিন হবে। এগুলো দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। এরপরই বাস্তবায়ন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেপাকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) একটি উন্নত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে এই চুক্তি সই করেছে ভারত। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার ২০২৬ সালের আগে ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান, সিঙ্গাপুরের সঙ্গে পিটিএ বা এফটিএ করতে চায়।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ২০১৮ সালে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশ প্রথমে একটি সেপা সই করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছিল। ওই বছরেই উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা সেপা সই করার বিষয়ে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাতে সম্মত হন।
বিগত বছরগুলোর আমদানি রপ্তানী পর্ষালোচনায় দেখা যায় ।বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অধিকাংশ সময়ে ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা প্রায় ২শ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে। তার বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি ডলারের পণ্য। এই হিসেবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪২০ কোটি ডলারের মতো।