প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

মিউচুয়াল ফান্ডের অপার সম্ভাবনার সীমিত ব্যবহার

নিয়াজ মাহমুদ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২৫:২৭ | আপডেট: ১ year আগে
মিউচুয়াল ফান্ডের অপার সম্ভাবনার সীমিত ব্যবহার

দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের আকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় মাত্র শুন্য দশমিক ৪ শতাংশ, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত, ৫৪টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশের মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ মূল্য ছিল ১৬০ কোটি ডলারের। বিপরীতে একই সময়ে ভারতে ৪৩টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত ভারতের মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ছিল ৪৭২ বিলিয়ন ডলার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের অভাব এবং আস্থার সংকট কারণে দেশে মিউচুয়াল ফান্ড জনপ্রিয় হয়নি।

আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, “উন্নত দেশে মিউচুয়াল ফান্ড সবচেয়ে জনপ্রিয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এ শিল্পের আকার অর্থনীতির চেয়েও বড়।"

কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের আকারের দিক থেকে প্রতিবেশী ভারতের থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

দেশের জিডিপি অনুপাতে মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ:

বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ জিডিপি অনুপাত মাত্র শুন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু ভারতে এর অনুপাত ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৫৪ শতাংশ, পাকিস্তানে এক দশমিক ৩ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং কানাডায় ১৮০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

অভিহিত মূল্যের নিচে মিউচুয়াল ফান্ড:

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৬টির মধ্যে ২৯টি ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিহিত মূল্য এবং নেট অ্যাসেট ভ্যালুর (এনএভি) নীচে লেনদেন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারী এবং পোর্টফোলিও ম্যানেজার উভয় বিনিয়োগকারীকে হতাশ করেছে।

লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের বিনিয়োগ গাইড ২০২২ অনুসারে, তহবিল ব্যবস্থাপকদের মধ্যে, ২০২১ সালে শীর্ষস্থানে ছিল ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল। ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল দ্বারা পরিচালিত তহবিলের সম্পদ মূল্য আলোচ্য বছরে ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিএপিএম। যার সম্পদ মূল্য বেড়েছে ১৯ দশমিক শুন্য ৫ শতাংশ।

দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড কেন জনপ্রিয় নয়:

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মিউচুয়াল ফান্ডের জনপ্রিয়তা কম হওয়ার পেছনে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এই কারণগুলি হল- আর্থিক স্বাক্ষরতার অভাব, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ক্রয়-বিক্রয়ের সহজ উপায় না থাকা, নির্দিষ্ট আয়-কেন্দ্রিক তহবিলের অভাব, সম্পদ এবং খাত বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা এবং প্রচার ও বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানিগুলির অভাব।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে দরপতনের ফলে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ভালো মুনাফা করতে পারেনি। ফলে আগের বছরের তুলনায় এ বছরে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ইউনিট হোল্ডারদের জন্য কম লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, “মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ার বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গত ১০ বছরে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেছেন, একজন তহবিল ব্যবস্থাপককে ভালো রিটার্ন দেয়ার মাধ্যমে পেশাদারভাবে তহবিল পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এ শিল্পকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কারণ তহবিল পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত অসঙ্গতিগুলি ইতোমধ্যে সনাক্ত করা হয়েছে।”

অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডের সভাপতি হাসান ইমাম বলেন, “আমরা এক বছরের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের আকার কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছি। সেই লক্ষ্যে, প্রতিটি তহবিল ব্যবস্থাপককে আলাদাভাবে অবদান রাখতে হবে।”

তিনি বলেন, এ বছর প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ড এফডিআর থেকে অর্জিত লাভ থেকে ভালো নগদ লভ্যাংশ দেয়। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো গড়ে ৭ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।