প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

মুঘল আমল থেকেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চকবাজারের ইফতার

হামিমুর রহমান ওয়ালীউল্লাহ
০৭ এপ্রিল ২০২২ ১৭:৫৯:৪৮ | আপডেট: ৩ years আগে
মুঘল আমল থেকেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চকবাজারের ইফতার

চকবাজার শুধু রাজধানীর প্রাচীনতম ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত নয়, পবিত্র রমজান মাসে প্রচলিত ইফতার সামগ্রীর জন্য ঐতিহ্যের স্থানও বটে, যা শতাব্দী ধরে চলছে।

সূর্য পশ্চিম দিগন্তের দিকে ঝুঁকে পড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্বাদের এবং ঐতিহ্যের ইফতার সামগ্রীর বিক্রি শুরু হয় চকবাজারে। ইফতারের আগ মুহূর্তে এই স্থানে যাওয়ার রাস্তাগুলো মানুষের সাগরে পরিণত হয়েছে এবং যানবাহন চলাচল করতে হিমশিম খাচ্ছে।

শত শত অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলো ইফতার সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে। এখানকার আইটেম কেনার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, যা কারও পক্ষে এরিয়ে যাওয়া কঠিন।

চকবাজারের অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা বলেন, “আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী তৈরি এবং বিক্রি করতে এই বছর খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। যেহেতু কোভিড বিধিনিষেধ চলে গেছে। তাই সবাই এই সময়ে অনেক গ্রাহক পাচ্ছি, আমরা খুশি।”

তারা আরও বলেন, “আগের মতোই সুস্বাদু খাবার কিনতে অনেক দূর থেকে গ্রাহকরা এখানে আসছেন। আমাদের এ আয়োজন মুঘল আমল থেকে ঐতিহ্য চলে আসছে।”

কারিগররা ইফতারের বৈচিত্র্য তৈরিতে খুব দক্ষ, তাদের তৈরি ইফতারিতে আকর্ষণ করে গ্রাহকদের।

সাম্প্রতিক ইফতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, "শাহী মসজিদ" এর সামনের দোকানে দোকানে সুস্বাদু ইফতার সামগ্রী সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সুতি কাবাব, শাহী পরাঠা, সিঙ্গারা, শাহী হালিমসহ মশলাদার খাবারের সুগন্ধ পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

এখানে রমজানের প্রথম দিন থেকেই বিক্রিতে বেগ পেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। এতে তারা বেশ খুশি।

চকবাজারের সুতি কাবাব একটি মুঘল যুগের খাবার, যা অন্যতম জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী আইটেম। যার দাম প্রতি কেজি ১২শ থেকে ১৪শ টাকায় বিক্রি হয়।

আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য আইটেম বোরো বাপের পোলাই খাই। এটি চিকেন, মাটন কাবাব, সুতি কাবাব, কিমা, ভাজা ছোলা, ইত্যাদিসহ ১২টি আইটেমের মিশ্র সুস্বাদু খাবার। যা প্রতি কেজি ৬শ টাকায় বিক্রি হয়।

বাপে পোলাই খাই, ঠোঙ্গা ভয়রা লোইয়া জাই- এ বাক্য এই অঞ্চলের চারপাশে ব্যবসায়ীদের মুখে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।

বাবার সাথে ইফতারে আসা একজন শিক্ষার্থী আকিব বলেন, “প্রতি বছর আমরা মোহাম্মদপুর থেকে চকবাজারে আসি এই সুস্বাদু ইফতার কেনার জন্য।

অন্যান্য ইফতার সামগ্রীর মধ্যে শাহী পরাঠা ৬০ টাকা, মাটন কোফতা ৪০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের কাবাব ২০ থেকে ৬০ টাকা, আস্ত মুরগি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কোয়েল ৭০ টাকা থেকে ১২০ টাকায়। আর আস্ত লেগ মাটন ৭০০ টাকায় পাওয়া যায়।

সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই থেকে তিন কেজি ওজনের শাহী জিলাপি বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় এবং শাহী হালিমের দাম ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা।

এছাড়া পানীয় মধ্যে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় বাহি বোরা বা দোই দোবানি, কাশ্মীর পেস্তা বাদাম শরবত, লাবাং এবং আরও অনেক পানীয়।

মোহাম্মদ হোসাইন নামের একজন বিক্রেতা দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, আমরা এ বছর ব্যাপক সাড়া পেয়েছি এবং বেশিরভাগ আইটেম আসরের নামাজের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।

তবে ক্রেতারা বলছেন, এবার ইফতার সামগ্রীর আগের চেয়ে বেশি। আমরা দুই বছর আগে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বোরো বাপের পোলাই খই কিনেছিলাম যা এখন ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কিন্তু ক্রেতার এই অভিযোগ মানতে নারাজ বিক্রেতারা। ইফতার ব্যবসায়ী নূর হোসেন জানান, গত বছরের দামেই বিক্রি করছেন তারা।