প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:৫৬:৩৪ | আপডেট: ৩ years আগে
মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

মেহেদী হাসান

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টিসহ ১১টি তফসিলি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। যা এসব ব্যাংকের ক্রমবর্ধমান আর্থিক দুরবস্থাই প্রকাশ করে।

ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং এবি ব্যাংক।

এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এ বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩.৭৯ টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ১১ হাজার ২২৯.১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রান্তিক কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ব্যাংকের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া।

তিনি বলেন, এই ক্ষুদ্র ঋণের পরিচালন খরচ অন্যান্য ঋণের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে ব্যাংকটি ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরকারকেই মূলধনের অভাব পূরণ করতে হবে বলেও মনে করেন প্রধানিয়া।

রাষ্ট্র পরিচালিত অগ্রণী ব্যাংকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ৯৬০.২৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি ক্যান্সারের মতো। এটা সত্য যে ঘাটতি কমানো যায়নি।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, আমরা জনগণকে ৩৪টি সরকারি সেবা দিয়ে যাচ্ছি, কোনো মূল্য ছাড়াই। এছাড়াও, সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেক ঋণ রয়েছে। যদি সেসব ঋণ আদায় করতে পারি, তাহলে কোনো মূলধন ঘাটতি থাকবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২৭.২৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩৪৫.০৪ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৬৬৪.৯৪ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৩ হাজার ৫৫৭.৮৬ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের ৩২৯.৫২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ১৪৬.২১ কোটি টাকায়, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৬৪২.৪৬ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ৪৬১.৪৯ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৫০৬.৪০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১১.৫৭ শতাংশে। যা তিন মাস আগে ছিল ১১.৬৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সাধারণত কোন দেশে বিনিয়োগের আগে ব্যাংকের প্রয়োজনীয় মূলধন এবং খেলাপি ঋণের অনুপাত পর্যবেক্ষণ করে। কম মূলধনের পর্যাপ্ততায় তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে মূলধনের অবস্থা খারাপ ছিল না। এখন, বিশাল অনাদায়ী ঋণের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং কিছু নতুন ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি ভালো নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, যেমন-ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার তুলনায় মূলধন পর্যাপ্ততায় সর্বনিম্ন।