বাংলাদেশের জন্য নতুন মার্কিন ভিসা নীতি স্বল্পমেয়াদে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
তাদের দাবি, যেহেতু উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন এবং দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা নিরসনে যৌথভাবে কাজ করছেন, তাই দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা কঠিন।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে অস্বস্তি বোধ করলে দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নতুন ভিসা নীতির বেশিরভাগই রাজনৈতিক উল্লেখ করে পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হওয়ায় রপ্তানি খাতে এই পদক্ষেপের প্রভাব পড়বে না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগে বাংলাদেশীদের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা ভুগতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু তাদের একক আধিপত্য হারিয়েছে, তাদের বিরোধীরা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসাইন বলেন, ‘এটি আমাদের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না তা এখনই বলা কঠিন। তবে দুই পক্ষের প্রতিক্রিয়া না আসা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যেখানে বাংলাদেশ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে এবং মার্কিন-চীন চলমান দ্বন্দ্বে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো চীন থেকে বাংলাদেশের দিকে আগ্রহী হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের এফডিআইতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে মার্কিন বাজারে ১০.৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যারমধ্যে শুধু পোশাক খাত থেকেই ৯.০১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চলমান অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৭.৯৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করেছে এবং পোশাক খাত মোট আয় করেছে প্রায় ৭ বিলিয়ন। এছাড়াও হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যসহ খাতগুলোও মার্কিন বাজার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আয় করেছে।
গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেন, তার দেশ অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এই ভিসা নীতির আওতায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত এমন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিককে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।’
এরআগে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উল্লেখ করে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
এছাড়াও, গত বছরের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডির উপ-প্রশাসক ইসোবেল কোলম্যান জানিয়েছিলেন, শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের উদ্বেগের কারণে ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ সত্ত্বেও, দেশটির তুলা রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি বাড়াতে অত্যন্ত আগ্রহী। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকার তুলা ব্যবসা সচল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, নতুন ভিসা নীতি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তিনি বলেন,‘আমরা মার্কিন ব্যবসায়ীদের সাথে যৌথভাবে প্রতিবন্ধকতাগুলো সমাধান করার পাশাপাশি দেশের তৈরি পোশাকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।’
এ বিষয়ে তুলিকা ইকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পাট পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির পরিচালক ইসরাত জাহান চৌধুরী বলেন, তিনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেখেছেন যে তারা বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা বাড়াতে অত্যন্ত আগ্রহী।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক এবং ব্যবসার মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই। তবে সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের উচিত আরও কঠিন পরিস্থিতি এড়াতে যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি সমাধান করা।