প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

লাল শ্রেণিভুক্তি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের জন্য প্রতিবন্ধকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ মে ২০২৩ ২০:১৫:২১ | আপডেট: ২ years আগে
লাল শ্রেণিভুক্তি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের জন্য প্রতিবন্ধকতা

পরিবেশ অধিদপ্তর জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পটিকে 'লাল' শ্রেণিভুক্ত করায় এ খাতে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা, বিলম্ব, হয়রানি এবং লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশের শিপ ব্রেকিং শিল্পের মালিকরা।

এ শিল্পকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা,২০২৩ এ 'লাল' শ্রেণিভুক্ত করায় বিভাজনের পূর্বে প্রতিটি জাহাজের জন্য ডিওই মহাপরিচালক হতে ২য় দফা পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের নিয়ম করায় একটি জাহাজ ভাঙ্গার অনুমতি পেতে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই মাস লাগে। এতে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ইয়ার্ড মালিকদের হয়রানি বেড়েছে।

তাছাড়া জাহাজ সৈকতায়নের পর কাটিংয়ের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণেরর জটিলতা ও বিলম্বের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজ ভাঙ্গতে না পারায় ইয়ার্ড মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ)। এতে জানানো হয়, এই শিল্পটি আগে “অরেঞ্জ-বি” হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা,১৯৯৭ এ ‘কমলা-খ’ শ্রেণিভুক্ত ছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর উক্ত বিধিমালার ব্যর্থয় ঘটিয়ে এ শিল্পকে ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর নির্বাহী আদেশে ‘লাল শ্রেণিভুক্ত করে। তখন এ শিল্প সম্পর্কে বর্হিবিশ্বে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উক্ত শ্রেণি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ড (বিএসআরবি) সভায় আলোচনা করা হয় এবং জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে লাল শ্রেণি’ থেকে ‘কমলা-খ’ শ্রেণিভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ এবং বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর ২২.০০.০০০০.০৭৪.১৪.০১২.১৮/১৬১ নং স্মারকে এ শিল্পকে পুনরায় ‘কমলা-খ’ শ্রেণিভুক্ত করে।

অতঃপর জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের পরিবেশ সুরক্ষা এবং কর্মরত শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিষ্ফোরক অধিদপ্তরের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে ইয়ার্ড মালিকগণ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। আরো উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করে এ শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) এর গাইডলাইন অনুযায়ী নরওয়েজিয়ান সরকারের অর্থ সহায়তায় (নোরাড ফান্ড) সেফ ও এনভায়রনমেন্ট সাউন্ড শিপ রিসাইক্লিংপ্রজেক্ট এর ফ্রেস-১ এবং ফ্রেস-২ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফ্রেস-১ এর আওতায় ইয়ার্ডের শ্রমিক-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল প্রস্তুত এবং তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও ফ্রেস-২ এর আওতায় ৭০০ ইয়ার্ড শ্রমিককে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং টিওটি কোর্সের মাধ্যমে ২০০ জন প্রশিক্ষিত ট্রেইনার তৈরি করা হয়েছে। ফ্রেস-৩ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন আছে। বর্তমানে এ সকল প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিক দ্বারা পরিবেশসম্মতভাবে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, এ শিল্প খাত থেকে উৎপাদিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক সীতাকুন্ড এলাকায় একটি থ্রেটমেন্ট স্টোরেজ ও ডিসপোসাল ফ্যাসিলিটি নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। তাছাড়া হংকং কনভেনশন এর গাইডলাইন অনুযায়ী জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ক্রমান্বয়ে গ্রীন শিপ ব্রেকিং এবং রিসাইক্লিং এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ৩টি ইয়ার্ড গ্রীন শিপ ব্রেকিং এবং রিসাইক্লিং ইয়ার্ড এ উন্নীত হয়েছে। উক্ত ইয়ার্ডগুলো গ্রীন শিপ ব্রেকিং এবং রিসাইক্লিং ইয়ার্ড হিসেবে ক্লাস-এনকে'র সনদ পেয়েছে। আর একটি ইয়ার্ড আইআরএস সার্টিফিকেট পেয়েছে। উক্ত ইয়ার্ডও সহসা গ্রীন শিপ ব্রেকিং এবং রিসাইক্লিং ইয়ার্ড হিসেবে ক্লাস-এনকে'র সনদপ্রাপ্ত হবে। গ্রীন শিপ ব্রেকিং এবং রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে অন্যান্য ইয়ার্ডগুলোতে শিপ রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি প্লান বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত গতিতে আগাচ্ছে। বর্তমানে এ শিল্পের কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় অনেক উন্নত, মেকানাইজড, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা জাপান সফরকালে জাপান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে গত এ বছরে ২৬ এপ্রিল জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা স্মারক (মেমোরেনডম অফ কো-অপারেশন) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন-২০১৮ এর বিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প সংক্রান্ত হংকং কনভেনশন রেটিফাই করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া এ শিল্পের সার্বিক কার্যক্রম বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ড এর নিয়ন্ত্রণে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর মাধ্যমে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস এনশিয়র করার জন্য বোর্ডে পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি ও সদস্য হিসেবে আছেন। আশা করি সহসা বোর্ডের মাধ্যমে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হবে।

এ অবস্থায় শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডকে না জানিয়ে বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার মতামত না নিয়ে এবং প্রধান স্টেক হোল্ডার হিসেবে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এর মতামত গ্রহন না করে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা,২০২৩ এ ‘লাল শ্রেনী’ভূক্ত করার কারণ বোধগম্য নয়। এ শিল্পকে ‘লাল শ্রেণিভুক্ত করার ফলে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালীন এ শিল্প সংক্রান্ত জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত সহযোগীতা স্মারক (মেমোরেনডম অফ কো-অপারেশন) এর মর্যাদাহানি করা হয়েছে। তাছাড়া এ শিল্প সংক্রান্ত হংকং কনভেনশন রেটিফিকেশনার উদ্যোগে নেতিবাচক প্রভাবের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।

অধিকন্তু এ শিল্পকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা,২০২৩ এ ‘লাল শ্রেণিভুক্ত করায় বিভাজনের পূর্বে প্রতিটি জাহাজের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে ২য় দফা পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহনের বাধ্যবাদকতা আরোপ করায় একটি জাহাজের বিভাজন অনুমতি পেতে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই মাস সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এছাড়া এ ব্যবস্থা আরোপের ফলে অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং ইয়ার্ড মালিকদের হয়রানি বেড়েছে। তাছাড়া জাহাজ সৈকতায়নের পর কাটিংয়ের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহনের জটিলতা ও বিলম্বের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজ বিভাজন করতে না পারায় ইয়ার্ড মালিকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগকারী ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ইয়ার্ড মালিকগণ এ জটিল ও হয়রানিমূলক অবস্থার অবসান এবং পূর্বের নিয়মে সহজে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান।