দেশে সার্বিক রপ্তানি ৩৪ শতাংশ বাড়লেও সম্ভাবনাময় খাত সবজি রপ্তানিতে উল্টোগতি। সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ থেকে সবজি রপ্তানি আগের অর্থ বছরের তুলনায় কমেছে ১৫ শতাংশ। এ সময় আলু, টমেটো, কচুর লতি, পটল, ধুন্দলসহ প্রায় সবধরণের সবজি রপ্তানিই কমেছে।
রপ্তানিকারকরা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে জানান, গত বছর সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরণের তিনটি সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের। বিমানবন্দরের স্ক্যানার নষ্ট হয়ে দীর্ঘ দিন রপ্তানি বন্ধ ছিলো। এছাড়া অতিরিক্ত মালবাহী ভাড়া ও কার্গো স্বল্পতাও ছিলো।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও শ্রীলংকার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় দেশগুলোতে আলু রপ্তানি তেমন হচ্ছেনা। যার প্রভাব দেশের সবজি রপ্তানিতেও পড়ছে বলে মনে করেন অনেকেই।
এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো’র (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর করোনার প্রভাব থাকলেও দেশে থেকে ১১.৮৭ কোটি ডলার সমমূল্যের সবজি রপ্তানি হয়েছিলো। তবে সদ্যবিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে করোনার প্রভাব খুব একটা না থাকলেও এ খাতে রপ্তানি কমেছে ১.৮৮ কোটি ডলার বা ১৫ শতাংশ। এ সময় সবজি রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ৯.৯৯ কোটি ডলার।
ইপিবি’র তথ্য বলছে, বর্তমানে ৩৫টি দেশে আলু, টমেটো, কচুর লতি, কলার মোচা, ধুন্দল, ফুলকপি, বাধাকপি, করলা, কাঁচামরিচ, ঢেঁড়শসহ ৩০ থেকে ৩৫ রকমের সবজি রপ্তানি হচ্ছে।
ইউরোপ, আমেরিকা, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবজি। মূলত এসব সবজির ক্রেতা প্রবাসী বাঙালিসহ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। আর যেসব দেশে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ বেশি সেখানে সবজির কদরও বেশি।
শাক-সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের রপ্তানিকারকরা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলছে, দেশের রপ্তানিকারকরা সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগীতায় পড়েন ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানিকারকদের কাছে। বাংলাদেশ থেকে তুলনামূকভাবে সবজি রপ্তানি খরচ বেশি। তার উপর গত বছর প্রতি কেজি সবজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় বা দেশে সবজি পাঠাতে। তার উপর গত মার্চ মাসে শাহজালাল বিমানবন্দরের এক মাত্র সবজির স্ক্যানারটি নষ্ট হয়ে পড়েছে।
এছাড়া গত বছর সবজি রপ্তানির জন্য কার্গো স্পেস সংকটও ছিলো। সবমিলিয়ে উৎপাদন ও চাহিদা ব্যপক থাকলেও সময়মতো সবজি রপ্তানি করা যায়নি।
ইপিবি ২০২১-২২ সালের জন্য ১২ কোটি ডলার সমমূল্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো। সে হিসেবে সবজি রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ কম হয়েছে।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর দেশ থেকে আলু রপ্তানি হয়েছিলো ৫ কোটি ডলার সমমূল্যের। যা ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৪৬ শতাংশ কমে ২.৭৫ কোটি ডলার হয়েছে।
এ ছাড়া আগের বছর তুলনায় টমেটো রপ্তানি কমেছে ৬৫ শতাংশ। একই সাথে আগের বছর (২০২০-২১) কলার মোচা রপ্তানি করে আয় করেছিলো ৩ হাজার ডলারের উপরে। কিন্তু গত বছর (২০২১-২২) এ খাতে কোন রপ্তানি ছিলোনা।
এছাড়া কুমড়া, স্কোয়াশ রপ্তানি করে ২০২০-২১ অর্থ বছরে আয় হয়েছিলো ৪৮.৯৭ ডলার। গত বছর তা কমে ২৬.৫০ ডলারে নেমে আসে।
জানতে চাইলে শাক-সবজি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, দেশে সবজি রপ্তানির জন্য অনুমোদিত স্ক্যানার রয়েছে দুটি। তার মধ্যে একটি গত এক বছর ধরে বিকল হয়ে আছে। আরেকটি মাঝে মাঝেই বিকল হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, আমরা সাধারণত চুক্তিভিত্তিক সবজি উৎপাদন করি। যেসব কৃষক আমাদের সবজি সরবরাহ করে তাদের খচরও বেশি হয়। এসব উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করেন না তারা। তাই আমরা রপ্তানি করতে না পারলে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে তারাও লোকসানে পড়েন।
তিনি আরও জানান, কিছু ক্ষেত্রে রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে ফুলকপি, বাধাকপি ও ব্রকলি অন্যতম। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৮.৬৮ লাখ ডলারের রপ্তানির বিপরীতে গত অর্থ বছর এখাতে রপ্তানি হয়েছে ৩১.৭৭ লাখ ডলার।