প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

সার্কিট বোর্ড আমদানিতে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২১:৩৪ | আপডেট: ১ year আগে
সার্কিট বোর্ড আমদানিতে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি

আমদানি করা হচ্ছে প্রসেসর যুক্ত অবস্থায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড। অথচ পণ্যটি ঘোষণা দেওয়া হয় সিঙ্গেল ফেজ বৈদ্যুতিক মিটারের পার্টস হিসেবে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের এই হারানো রাজস্বের পরিমাণ আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছেন সৎ ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, চিপস/প্রসেসর সংযুক্ত অবস্থায় প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড এসেনশিয়াল ক্যারেক্টার হওয়ার পরও চীন থেকে পণ্যটি মিথ্যা ঘোষণায় সিঙ্গেল ফেজ বৈদ্যুতিক মিটারের পার্টস হিসাবে আমদানি এবং সংযোজন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাধন ইলেক্ট্রিক্যাল লিমিটেড, বি এন্ড টি মিটার লিমিটেড, টেকনো ইলেক্ট্রিক্যাল লিমিটেড, ইউনিভারসল পাওয়ার লিঃ, প্যারাডাইস ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, নর্দান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, হোসাফ মিটার।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম শুল্ক বন্দর কর্মকর্তাদের সাথে বুয়েটের মিটিংয়ে সেল ইলেকট্রনিকস ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের সিঙ্গেল ফেজ বৈদ্যুতিক মিটারের পার্টস সম্পর্কে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের সঙ্গে চিপস/প্রসেসর সংযুক্ত অবস্থায় থাকলে সেটাকে এসেনশিয়াল ক্যারেক্টার হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।

তবে এরপরও চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, আইসিডি, কমলাপুর, ঢাকা কাস্টমস থেকে এসব পার্টস মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সিঙ্গেল ফেজ বৈদ্যুতিক মিটারের পার্টস হিসাবে আমদানি করা হয়েছে। যার এইচএস কোড ৯০২৮.৯০.১০।

জানা গেছে, এই এইচএস কোডের বিপরীতে আমদানি শুল্কের পরিমাণ ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড এসেনশিয়াল ক্যারেক্টার হওয়ায় এর এইচ এস কোড হওয়ার কথা ৯০২৮.৩০.১০। এর বিপরীতে আমদানি শুল্কের পরিমাণ ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের আনুমানিক ওজন ৩০ গ্রাম। ৭ ডলার ট্যারিফ রেট ধরে হিসাব করলে আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ২১ ডলার। সে হিসেবে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য শূন্য দশমিক শূন্য ৯ ডলার। অন্যদিকে সিঙ্গেল ফেজ বৈদ্যুতিক মিটারের পার্টসের ট্যারিফ মূল্য ১২ ডলার। সে হিসেবে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দাঁড়ায় ৭ ডলার। প্রতি ডলারের মূল্য ১১০ টাকা ধরে হিসাব করলে দুই ক্ষেত্রে শুল্ক পার্থক্য দাঁড়ায় ৭৬৩ টাকা। ২০ লাখ পিস আমদানি করলে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা। যদিও শুধুমাত্র পল্লী উন্নয়ন বিদ্যুতায়ন বোর্ডই বছরে ৪০ লাখ মিটার কিনে থাকে বলে জানা গেছে।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, এভাবে কোম্পানিগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিলে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অন্যদিকে সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে। তাই এ বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আদায় করা এনবিআরের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।