প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

হিরোর পরিবারকে বিএসইসি'র ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা

নিয়াজ মাহমুদ
১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:২৬:২৮ | আপডেট: ২ years আগে
হিরোর পরিবারকে বিএসইসি'র ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি ওয়ান ব্যাংক এবং বিডিকম অনলাইনের শেয়ার কারসাজির দায়ে হিরো নামে পরিচিত মোঃ আবুল খায়ের এবং তার সহযোগীদের ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

গত ২ আগস্ট অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। এর মধ্যে ৩ কোটি টাকা ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির জন্য বাকি ৫৫ লাখ টাকা বিডিকমের শেয়ার কারসাজির জন্য জরিমানা করা হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী- গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর ৫৯.৬২ শতাংশ বেড়েছে। এবং চলতি বছরের মার্চের ৭ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১২.৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২০.১০ টাকা হয়েছে, শতাংশের হিসেবে বেড়েছে ৫৯.৬২ শতাংশ।

তদন্তে ডিএসই দেখতে পায় যে কাজী সাদিয়া হাসান (ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের ক্লায়েন্ট কোড # ৩৮৯৮) এ সময়ের মধ্যে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন। তিনি হিরোর স্ত্রী এবং মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যার চেয়ারম্যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।

এছাড়াও মোঃ আবুল খায়ের হিরো সেই সময় (অগ্রনী ইক্যুয়িটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ক্লায়েন্ট কোড # এবিএম ৬৪৫) থেকে ব্যাংকটির দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন। এছাড়াও হিরোর বাবা আবুল কালাম মাতবর (ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ক্লায়েন্ট কোড ৯১৬৬), এবং হিরোর বোন কনিকা আফরোজ, ওয়ান ব্যাংকের প্রধান ক্রেতা ছিলেন।

গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির শীর্ষে ছিলেন কাজী সাদিয়া হাসান। তিনি ৩ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৬ টি শেয়ার কিনেছেন এবং তদন্তের সময় ব্যাংকটির ২ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ১১০ টি শেয়ার বিক্রি করেছেন। যা এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির মোট লেনদেনের ১৩.৬৪ শতাংশ।

ডিএসই'র তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাদিয়া হাসান হলেন আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রী, তার সাথে সম্পর্কিত আরও ১৩ জন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের (অর্থাৎ বাবা, ভাই, বোন) সম্মিলিতভাবে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনে অংশ নিয়েছিলেন। আলোচ্য সময়ে এ কোম্পানির লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ ৪৭.০৭ শতাংশই এ ১৩ জন করেছেন।

ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আবুল কালাম মাতবর এবং তার সহযোগীরা এই সময়ের মধ্যে পাবলিক এবং ব্লক মার্কেট উভয় জায়গা থেকে ওয়ান ব্যাংকের ১৪ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৬৮৬ টি শেয়ার কিনেছেন এবং ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৫ টি শেয়ার বিক্রি করেছেন। এ সময় মাতবর এবং তার সহযোগীরা তাদের ১৪ টি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যাংকটির ৪৭.০৭ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করেছে। এবং এর মাধ্যমে ১৪.৩৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ -এর ধারা ১৭ অনুসারে, আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগীদের তিন কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এছাড়া চলতি বছরের ৭ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ২৩.৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪.৩০ টাকা হয়েছে। শতাংশের হিসেবে এটা ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ডিআইটি কো-অপারেটিভ, যেটি এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ক্লায়েন্ট কোড এস ২১১৬ এবং বিও আইডি ১৬০৪৫৩০০৬৫৭৫৭৮১ সহ আলোচ্য সময়ের মধ্যে বিডিকম অনলাইনের ৫ জন শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী- মোট ৫ টি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিডিকমের শেয়ার কারসাজি করা হয়।

৭ মার্চ বাজারে বিডিকমের মোট লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৭৬৬ টি, যেখানে ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড এবং সহযোগীদের ট্রেডের সংখ্যা ছিল ৩৬১ টি যা বাজারে মোট লেনদেনের সংখ্যার প্রায় ৪৭.১৩ শতাংশ। আবার সেদিন বাজারে বিডিকমের মোট টার্নওভার ছিল ৬.৮৮ কোটি টাকা।

যেখানে উক্ত ক্লায়েন্টের দ্বারাই টার্নওভারের ৪.৩৪ কোটি টাকা সম্পন্ন হয়। যা ওই সময়ে কোম্পানিটির মোট লেনদেনের ৬৩.০৯ শতাংশ।

ডিএসই তদন্ত দল আরও দেখতে পায় যে, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে, ডিআইটি কো-অপারেটিভ এবং সহযোগীরা বিডিকম-এর শেয়ার ক্রয়ের জন্য ৩৬১ টি হাওলা সম্পাদন করেছে, যেখানে মোট হাওলার সংখ্যা ৪৯৫ টি ছিল।

ডিএসই ট্রেড ডেটা অনুযায়ী, ডিআইটি কো-অপারেটিভ এবং সহযোগীরা তাদের পাঁচটি বিও অ্যাকাউন্টের সাথে ৭ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ব্লক এবং পাবলিক মার্কেট উভয় থেকে বিডিকমের ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৭৪০ টি শেয়ার কিনেছে এবং ৫১ লাখ ৪২ হাজার ৯৯০ টি শেয়ার বিক্রি করেছে।

এ সময়ের মধ্যে পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিআইটি কো-অপারেটিভ এবং সহযোগীরা সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির মোট লেনদেনের ৫৬.৪২ শতাংশ লেনদেন করেছে। এছাড়াও এ সময়ে কারসাজির মাধ্যমে বিডিকমের শেয়ারের লেনদেন থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ ৩ হাজার ৬৫১ দশমিক ৮৬ টাকা মুনাফা করেছে।

এ কারণে ডিআইটি কো-অপারেটিভকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ -এর ধারা ১৭ অনুসারে, ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।