প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

১০ লাখের কোম্পানি, ঋণ পেয়েছে ১১৭ কোটি

তালুকদার ফরহাদ
১৬ জুলাই ২০২৩ ১৯:৪৯:৩০ | আপডেট: ১ year আগে
১০ লাখের কোম্পানি, ঋণ পেয়েছে ১১৭ কোটি

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির কাহিনীর যেনো শেষ নেই। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের অনিয়ম দেখা যায়।

বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার কয়েক বছর পর ব্যাংকটি মাত্র ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে একটি কোম্পানিকে ১১৭ কোটি টাকা ঋণ দেয়। পরবর্তীতে ওই কোম্পানি  ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে ব্যাংকের লোকসান হয় ১০৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট অনুসারে, বেসিক ব্যাংকে  ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে অডিট করে সিএজি। ১৬বার অডিট পরিচালনা করে সেখানে ৩৪০.১৬ কোটি টাকার অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

অডিট রিপোর্টে  গুরুতর অনিয়ম; যেমন ঋণের বিপরীতে জামানতের অত্যাধিক মূল্যায়ন, অপর্যাপ্ত জামানত, তহবিলের অপব্যবহার এবং ঋণের অনিয়মিত পুনঃনির্ধারণের বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

ফেব্রুয়ারি ২০১৬-সালে, বেসিক ব্যাংকের বংশাল শাখা ঢাকা ব্যাংক থেকে দায় অধিগ্রহণ করে রপ্তানিমুখী জুতা প্রস্তুতকারক জিল ওয়ার্স-কে ১১৭.৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে।

শাখার বিভিন্ন নথিপত্র পরীক্ষা করে সিএজি অডিট দল দেখতে পায়, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২০ কোটি টাকা, কিন্তু পরিশোধিত মূলধন মাত্র ১০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিজনেস পোস্ট-এন পক্ষ থেকে জিল ওয়ার্স এর চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন তারিক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিনের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

সিএজি রিপোর্ট অনুযায়ী, জিল ওয়ার্স-এর রপ্তানি আয় থেকে আমদানি দায় পরিশোধ না করায় ৪৮.১১ কোটি টাকা ঋণ হয়। কোম্পানিটি ঋণ খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকের পাওনা এখন ১০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।

যখন কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন বাংলাদেশ ব্যাংককে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে জিল ওয়ার্স-এর পক্ষে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮০ ডলার দিতে হয়েছিল।

কুমিল্লা ভিত্তিক কোম্পানিটি ঋণের বিপরীতে জামানত হিসাবে জমি, কারখানার অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি দেখিয়েছে ৪৬১.৭৫ দশমিক ৫। জমিসহ পুরো কারখানার বাজার মূল্য দেখানো হয়েছে ৯৩.১২ কোটি টাকা, যদিও প্রকৃত স্পট মূল্য ছিল ৭১.০৩ কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের উত্তর

সিএজি অডিটের আপত্তিতে, বেসিক ব্যাংক জানিয়েছে যে শ্রমিক অসন্তোষ এবং অগ্নিকাণ্ডের কারণে কোম্পানির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

এছাড়াও, প্রধান গ্রাহক সিয়ার্স-এর দেউলিয়া হওয়া, রপ্তানি প্রক্রিয়া মধ্যস্থতাকারীদের সাথে কমিশনের জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে জিল-এর রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

এই ধরনের পরিস্থিতি তুলে ধরার পর, বেসিক ব্যাংক বিশেষভাবে এই অডিট থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সিএজিকে অনুরোধ করে।

জবাবে, সিএজি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, এই আপত্তিগুলি নিষ্পত্তির পক্ষে উপযুক্ত নয়। কারণ এসব ঋণ পুনরুদ্ধারের সুযোগ থাকলেও কিস্তি আদায় না করে ঋণ পুনঃর্নির্ধারণ সুবিধা বেছে নিয়েছে বেসিক ব্যাংক।

সিএজি রিপোর্ট বলছে, এই উত্তরের বিপরীতে ব্যাংকের কাছ থেকে আর কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

অসঙ্গতির অভাব নেই

সর্বশেষ সিএজি রিপোর্টের অধীনে, আরেকটি অডিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেসিক ব্যাংকের বংশাল শাখা ২০১৭ সালে এলসি খোলার দায়বদ্ধতার কারণে ৬৪.৫৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে।

ঋণগ্রহীতারা হল নাসিম প্লাস্টিক ও এনজি কম্পোজিট। এ টাকা আদায়ের জন্য এসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এদিকে, বংশাল শাখা, ২০১৫ সালে বিতরণ করা ঋণের অধীনে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ব্যাংকটি ৪০.৬২ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বেসিক ব্যাংক এই দায় থেকে মুক্তি পেতে চায়, কিন্তু সিএজি এই অনুরোধ বিবেচনায় অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ব্যাংককে এই টাকা উদ্ধার করতে বলে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় জামান টাওয়ারে স্থানান্তর করা হয়নি। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই জায়গার মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে।

এছাড়া ভাড়া বাবদ দেওয়া হয়েছে ১৮.০৬ কোটি টাকা, যা পুরোটায় গেছে ব্যাংকের  আর্থিক ক্ষতির তালিকায়।

অডিট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাজের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পরীক্ষা না করেই বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদানের কারণে লোকসানে পড়েছে ব্যাংকটি।