প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়লো বাংলাদেশি পোশাকের দাম

২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:০৬:৩১ | আপডেট: ৩ years আগে
অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়লো বাংলাদেশি পোশাকের দাম

আরিফুর রহমান তুহিন

বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পোশাকের দাম বেড়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালে দাম বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও রপ্তানিকৃত পোশাকের দাম বেড়েছে ০.৯ শতাংশ।

টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল অফিস (ওটিইএক্সএ) এবং ইউরোস্ট্যাটের তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি সঞ্চালিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সমীক্ষা বলছে, দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে বেড়েছে ২৩.৮ শতাংশ এবং ৮.৯ শতাংশ।

এ সময়ে, বাংলাদেশের রপ্তানি ২.৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং গত বছরের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯.৮ শতাংশ বেড়ে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬.২৭ মিলিয়ন ডলারে।

গত জুলাই-অক্টোবর মাসের মধ্যে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে যে বেশ ভাল হয়েছে, তাই বলছে এ পরিসংখ্যান।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যূনতম মূল্য দিয়ে আসছেন। ওই বাজারে জিএসপি সুবিধার অধীনে শুল্কমুক্ত রপ্তানি করতে পারছে বাংলাদেশ।

সূত্র বলছে, বেশিরভাগ মার্কিন ক্রেতা এখনও ন্যায্য মূল্য দিচ্ছেন না, যদিও দেশীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা ন্যায্য মূল্য আদায়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। কারণ, তাদের বর্তমানে ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট কাজের আদেশ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, এটা একটা ভালো লক্ষণ যে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভালো পারফর্ম করছি এবং তারা ন্যায্য দামের দিতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সংঘাত এবং চীনের শক্তি সংকটের কারণে তাদের (মার্কিন ক্রেতাদের) বিকল্প কোনো উৎস নেই। তারা (মার্কিন) এখন আমাদের কাছ থেকে কিনছেন। কারণ, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে কম খরচে তাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ খাতের রপ্তানি আয় আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।

বোনা পণ্যের রপ্তানি কম

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মতে, বাংলাদেশের মোট পোশাক পণ্য রপ্তানি চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালে ১২.৬২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা গত বছরের তুলনায় ২০.৭৮ শতাংশ বেশি।

একই সময়ে, নিটওয়্যার সেক্টরের রপ্তানি ৭.২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা বেড়েছে ২৪.২৭ শতাংশ। এ খাতের রপ্তানি ১৬.৪১ শতাংশ বৃদ্ধির সাথে ৫.৪১ বিলিয়ন আয় করেছে।

ইউএস এবং ইইউ উভয় বাজারেই, বোনা পণ্যের রপ্তানি সন্তোষজনক ছিল না, তবে নিটওয়্যার পণ্যগুলো বেশ ভাল পারফর্ম করেছে।

ওই সময়কালে, প্রতি ডজন বোনা কাপড়ের গড় দাম বেড়েছে মাত্র ১.৯ শতাংশ এবং মার্কিন বাজারে মোট রপ্তানি বেড়েছে ১১.১ শতাংশ। এছাড়াও, নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি আয় ৪৪.৬ শতাংশ বেড়েছে এবং গড় দাম ১৪.৩ শতাংশ বেড়েছে।

একই সময়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বাজারে বোনা কাপড়ের রপ্তানির দাম প্রতি কেজিতে ২.২ শতাংশ কমেছে, যদিও মূল্য ০.৮ শতাংশ এবং ভলিউম ৩ শতাংশ বেড়েছে।
নিটওয়্যার পণ্যের দাম কেজি প্রতি ৩ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে মূল্য ১৩.৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ভলিউম ১০.৩ শতাংশ বেড়েছে।

বোনা কাপড়ের রপ্তানিকারকরা বলেছেন, এ খাত কিছু সময় সমস্যায় পড়ে এবং করোনা মহামারি তাদের এ সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে নিপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: খসরু চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক হারের তুলনায় শিপমেন্ট খরচ ৫ থেকে ৫ গুণ বেড়েছে। হোম অফিস সুবিধার কারণে, ভোক্তাদের মধ্যে বোনা পণ্যের ব্যবহারও কমে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা এ জাতীয় সমস্যার কারণে বোনা পণ্যের দাম বাড়াতে পরিনি। যাইহোক, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ বাজার থেকে আমাদের কাছে কাজের ভালো পরিমাণে অর্ডার রয়েছে, আমরা ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফজলি শামীম এহসান বলেন, করোনা মহামারি যখন ভিয়েতনামে আঘাত হানে, তখন মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকেছিল।

তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম চেয়েছিলাম এবং ওই ক্রেতারা বিকল্পের অভাবে তা মেনেও নেন। এ কারণে মার্কিন বাজারে আমাদের রপ্তানি মূল্য বেড়েছে।