প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

অলস পড়ে আছে বিসিকের ২৩ শতাংশ কারখানা

মিরাজ শামস
১৪ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৫৭:৫৩ | আপডেট: ১ year আগে
অলস পড়ে আছে বিসিকের ২৩ শতাংশ কারখানা

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) বিভিন্ন শিল্পনগরীতে গড়ে ২৩.৬৩ শতাংশ শিল্প কারখানা অনুৎপাদনশীল অবস্থায় আছে। এমনকি বরাদ্দ দেওয়া অনেক প্লট যথাযথভাবে উৎপাদনে নিয়ে কাজে লাগাতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ সংস্থা।

বিসিক শিল্প নগরের প্লটের মালিকরা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কারখানা স্থাপন করতে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া বরাদ্দ থাকা প্লটের মধ্যে কিছু বাস্তবায়নাধীন ও কিছু রুগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। বিসিক শিল্প প্লট প্রস্তুত করলেও ব্যবহার না হওয়াতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের সুযোগ, কর্মহীন ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং প্রকৃত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর (এসএমই) ব্যবসা করার জন্য উপযুক্ত ভূমি পাওয়ার সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বিসিকের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

সারাদেশে বিসিকের ৮২টি শিল্পনগরীতে ১২,৩১৩টি শিল্পপ্লট ৫৯৮৪টি শিল্প ইউনিটকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদনে আছে ৪,৫৭০টি শিল্প ইউনিট। শিল্প প্লট বরাদ্দ নিয়ে শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে ৯৮২টি এবং রুগ্ন ও বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে ৪৩২টি। তবে বিসিক শিল্প নগরে গত জুন মাসেও ৯টি শিল্প ইউনিট চালু হয়েছে। গত এক বছরে ১২৯টি শিল্প ইউনিট চালু হয়েছে।

দুই বছর আগেও বিসিকে ৭৬টি শিল্পনগরীতে বিসিকের ১০,৯২২টি প্লট ছিল। তখন ৪,৫৭০টি কারখানা উৎপাদনে ছিল। এখন ৬টি শিল্প নগরী বাড়লেও উল্টো উৎপাদনশীল শিল্প কমেছে। হিসাব অনুযায়ী, চালু হওয়া শিল্প ইউনিটের চেয়ে রুগ্ন ও বন্ধ হয়েছে বেশি।

নীতিমালা অনুযায়ী, প্লটের বরাদ্দ বুঝে পাওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে সেখানে কারখানা তৈরি করতে হবে। বিসিক সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কারখানা তৈরি করে না। ১৯৬০ সালে এসএমইদের শিল্পায়নের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য ইউটিলিটি সেবা ও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থাসহ বাণিজ্যিক প্লটের উন্নয়ন ও বরাদ্দ দেওয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে।

বিসিকের গত মার্চ মাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৮০টি শিল্পনগরীতে ১১,৯২২টি শিল্প প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ১০,৭১৩টি শিল্প প্লট ৫,৮৫৮ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪,৫১১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু ছিল। আর ওই সময়ে ১,০০৩ বরাদ্দযোগ্য খালি প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন চায় বিসিক। এখন পর্যন্ত বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন অব্যহত রেখে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেখেছে সংস্থাটি।

প্লট পেতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র পাওয়ার পর বিসিক একটি সম্ভাব্যতা নিরীক্ষণ পরিচালনা করে এবং তারপর প্লটের বরাদ্দ দেয়। যদি কেউ সময়সীমার মধ্যে কারখানা তৈরি করতে না পারেন, তাহলে বরাদ্দ বাতিল হতে পারে। প্রতিটি প্লট ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা ইজারার পূর্ণ মূল্য একবারে অথবা পাঁচ বছর মেয়াদে ১০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারেন।

জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর এলাকায় সম্প্রসারিত ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বিসিক শিল্লনগর। নির্মাণকাজ শেষ হলেও বরাদ্দ হয়নি অর্ধেক শিল্প প্লট। বরাদ্দকৃত প্লটও খালি পড়ে আছে। এই শিল্প নগরে প্রতিবর্গফুট জমির মূল্য ৯১০.৪৩ টাকা। আর গোপালগঞ্জ শিল্পনগরীতে প্রতিবর্গফুট জমির দাম ৬২০.৬২ টাকা।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ নতুন শিল্পনগরে শিল্প প্লটের দাম বেশি। নেই গ্যাস সংযোগ। এসব কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, শিল্পনগরের আশেপাশের জমির দাম তুলনামূলক অনেক কম। তবুও চড়া দাম নিচ্ছে বিসিক।

বিসিকের শিল্পনগরীগুলোতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এসব নগরীতে প্রায় ৬৩,৩১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

বিসিকের পরিচালক আহসান কবির দ্যা বিজনেস পোস্টকে বলেন, খালি প্লটে শিল্প স্থাপনের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। আবেদন যাচাই বাছাই করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। শিল্পনগরীর প্লটগুলো উৎপাদনশীল খাতে আনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অব্যহত আছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে এসএমই উদ্যোক্তারা শিল্পায়ন বাড়াতে পারে। এ জন্য নতুন শিল্প নগরী স্থাপন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।