প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

আটার দাম কেজিতে বেড়েছে ১২, ময়দায় ২৫ টাকা

রোকন উদ্দিন
২৭ আগস্ট ২০২২ ১৭:৩৫:৫৩ | আপডেট: ২ years আগে
আটার দাম কেজিতে বেড়েছে ১২, ময়দায় ২৫ টাকা

গত এক সপ্তাহে নতুন করে আটা-ময়দার দাম কেজিপ্রতি ১২-২৫ টাকা বেড়েছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের বাজার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের প্রেক্ষিতে আটা-ময়দার দাম এর আগে হঠাৎ বেড়েছিল। তবে সে সময়ও এক সপ্তাহে এতোটা বাড়েনি।

শুধু আটা-ময়দা নয় বাড়ছে তেল চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও। গত মঙ্গলবার থেকে ভোজ্যতেল রিফাইনাররা লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছ সয়াবিন ও পাম তেলের দাম। ইতিমধ্যে চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বেড়েছে, দু-একদিনের মধ্যে চিনির দামও আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে ওঠেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের সাধারণ মানুষ। তবে দাম কমায় ফের বিক্রি বেড়েছে ডিমের।

বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন। এখন দাম কমে আসায় আবার বিক্রি আগের মতো বেড়েছে।

ক্রেতারা বলছেন, ডিমের মতো সব পণ্যই অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। এক্ষেত্রে পণ্য বর্জন একটি কার্যকর নীতি। গরুর মাংস, চিনি, তেলসহ যে সব পণ্যের অযৌক্তিক দাম বাড়বে সেগুলো পরিমাণে কম কিনে বা একেবারে বর্জন করে প্রতিবাদ করতে হবে, তাহলে বাজার সঠিক গতিতে চলবে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বসুন্ধরা, তীর, ফ্রেশ, ইফাদ, এসিআইসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২ কেজি আটার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২৬ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে এসব আটার দাম ছিল ৯০-১০২ টাকা। সে হিসেবে প্যাকেট আটার দাম কেজিপ্রতি ১২ টাকার বেশি বেড়েছে। প্যাকেট আটার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে খোলা আটার দামও। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হয়েছিল ৪৫-৪৮ টাকা কেজি, যা বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতিকেজি খোলা আটার দাম বেড়েছে ৫-৭ টাকা।

বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২ কেজির ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১৪৮-১৬৪ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯৮-১২৫ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ময়দার দাম বেড়েছে ১৯-২৫ টাকা।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবমতে, গত এক মাসে আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ। এক বছরে বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমলেও গত মে মাস থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে গমের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। ফলে গমের দাম বাড়তে থাকায় আটা-ময়দার দামও বাড়ছে।

এদিকে চিনির দাম আরো বেড়েছে চলতি সপ্তাহে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত চিনি বিক্রি হয়েছিল ৮৮-৯০ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে ৯০ টাকার নিচে চিনি মিলছে না কোথাও। প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারের গ্রোসারি শপের বিক্রেতা সিফাম রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনেছি ৪২৫০ টাকা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) এছাড়া লেবার খরচ ও পরিবহন ভাড়া মিলে আমাদের ৮৬-৮৭ টাকা কেজি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। ফলে ৯০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। এছাড়া ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো হঠাৎ আটা-ময়দার দামও বাড়িয়েছে। ভোজ্য তেল এখনও নতুন বোতল আসেনি। আসলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে।’

গত মঙ্গলবার ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম লিটারে ৭-৯ টাকা বাড়িয়ে খুচরায় প্রতি লিটার বোতলজাত ১৯২ টাকা ও খোলা ১৭৫ টাকা করা হয়।

হঠাৎ যে গতিতে ডিমের দাম বেড়েছিল আবার সেই গতিতেই কমেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। অনেক দোকানি ১১৫ টাকাতেও বিক্রি করছেন।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম বিক্রেতা নূরে আলম বলেন, ডিমের দাম কমে আসায় বিক্রি আবার আগের মতো বেড়েছে। আমি এক ভ্যান (৬০০০ পিস) ডিম এক থেকে দুই দিনে বিক্রি করে শেষ করতে পারছি। দাম বাড়ার পর তা শেষ করতে তিন দিন পর্যন্ত লেগেছিল।

বাজারে ডিম কিনতে আসা আবু তালেব নামের একজন ক্রেতা এক সঙ্গে আড়াই ডজন ডিম কিনে নিয়ে গেলেন। তিনি বলেন, দাম বাড়ার পর প্রতিবাদ হিসেবে ডিম কেনা পরিত্যাগ করেছিলাম। আমার মতো অনেকেই কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে দাম আবার কমে এসেছে। তাই আবার বেশি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। এভাবে যে পণ্যেরই অযৌক্তিক দাম বাড়বে প্রতিবাদ হিসেবে সে পণ্যই কেনাও বন্ধ করতে হবে। তা হলে বাজার সঠিক গতিতে নেমে আসবে।