ক্রমহ্রাসমান আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম গত আড়াই মাসে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কমলেও দেশের বাজারে সে হারে কমেনি। দেশের বাজারে দুই দফায় ভোজ্য তেলের দাম কমানো হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশও বাস্তাবায়ন হয়নি। ট্যারিফ কমিশন সর্বশেষ ভোজ্য তেলের দাম ১৬-২০ টাকা কমানোর সুপারিশ করলেও কমানো হয়েছে মাত্র ৬-১৪ টাকা।
বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি ভোজ্য তেলের আতর্জাতিক বাজারমূল্য ও দেশের উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনে ভোজ্য তেলের দাম কামানোর সুপারিশও করা হয়। প্রতিবেদনটি গত রোববার বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর উপর ভিত্তি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে প্রতি মেট্রিক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ১০৫০ মার্কিন ডলার থেকে ১২৮০ ডলারের মধ্যে বিক্রি হয়। এসময় পাম তেল বিক্রি হয় ৯৮০-১১৫০ ডলার প্রতি টন। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে মে মাস পর্যন্ত ভোজ্য তেলের মূল্য জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। এসময় সয়াবিন ও পাম তেল প্রতি টন ২০০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
তবে মে মাস থেকে আবার কমতে থাকে সবধরণের ভোজ্য তেলের দাম, যা এখন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ ডলার ও প্রতিটন পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০০ ডলারে। সে হিসেবে গত আড়াই মাসে অপরিশোধিত পাম ও সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৩০-৩৫ শতাংশ।
তবে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সে হারে কমেনি। দুই মাসে দুই দফায় ভোজ্য তেলের দাম কমেছে মাত্র ১০-১১ শতাংশ। এর মধ্যে পাম তেলের দাম প্রথম দফায় ৯ জুন ১৪ টাকা ও সোমবার ৬ টাকা; মোট ২০ টাকা কমানো হয়। ৯ জুনের আগে পাম তেলের দাম ছিল ১৭২ টাকা লিটার। সে হিসেবে কমেছে ১১ শতাংশ। আর সয়াবিন তেলের দাম প্রথম দফায় ২৬ জুন লিটার প্রতি ৬ ও সোমবার ১৪ টাকা মোট ২০ টাকা কমানো হয়। ২৫ জুন পর্যন্ত বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ২০৫ টাকা লিটার। সে হিসেবে দুই দফায় দাম কমেছে ১০ শতাংশ।
রোববার পাঠানো কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০-৩৫ শতাংশ কমলেও ডলারের উচ্চ মূল্য ও বর্ধিত পরিবহন ব্যয় হিসাব করে তেলের মূল্য বর্তমান দাম থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে সমন্বয় করতে পারে। রোববার বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরকারের বেধে দেয়া দাম ছিল ১৯৯ টাকা যার ১০ শতাংশ ১৯.৯ টাকা, পাম তেলের দাম ছিল ১৫৮ টাকা যার ১০ শতাংশ ১৫.৮০ টাকা কমানোর সুপারিশ ছিল কমিশনের।
রোববার বাণিজ্য সচিবের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম কমানো হচ্ছে ৭ শতাংশ ও পাম তেলে কমছে ৩.৫২ টাকা।
ব্যবসায়ীদের দাবি মুখে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত চলতি বছরে তিন দফায় লিটার প্রতি ৫৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এর তথ্য অনুসারে গত এক মাসে খুচরা বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে ২-১৫ শতাংশ। কমিশন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে থাকায় মিল মালিকরা মজুদ পণ্য বাজারে দ্রুত সরবরাহ করে লোকসানের ঝুঁকি হ্রাস করছেন। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোলা তেলের দাম বাজারের নিজস্ব গতিতেই কমছে। তবে বোতলজাত তেলের দাম গায়ে লেখা থাকে বলে ভোক্তারা সেই সুবিধা পাচ্ছে না।