নিম্ন ও মধ্যবিত্তের প্রধান আমিষের উৎস ডিম। এ খাদ্য পণ্যটির দাম আবারও বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
আবারও দাম বেড়ে প্রতিটি ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা ওঠেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় বেড়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা থেকে বেড়ে এই পর্যায়ে এসেছে।
উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য প্রধান উৎপাদন কমে আসা এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিই দায়ী। এ দুটি সমস্যা দূর করতে পারলে ডিমের দাম কমা রাখা সম্ভব। এজন্য সরকারের কিছু নীতিগত সহায়তা দরকার।
যদিও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, গত মাসে ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে কিছু উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের কারসাজি ছিল। এজন্য তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে প্রতিযোগীতা কমিশন। যদিও এবার ধীরে ধীরে বেড়েছে তারপরও দাম বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে যৌক্তিক কিনা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে রোববার খুচরা পর্যায়ে ফার্মের লাল ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজন বা ১২ টাকা ৫০ পয়সা প্রতিটি। চলতি মাসের শুরুতেও ডিমের দাম ১২০ টাকা ডজন বা ১০ টাকা প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে। সরকারি ট্রেডিং কর্পোরেশনের হিসেবে গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
এর আগে গত আগস্ট মাসের শুরুতে ডিমের দাম প্রতিডজন ১২০ টাকা থেকে হঠাৎ ৩০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় ওঠে যায়। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভিন্ন অভিযান চালালে ধীরে ধীরে কমে আবার ১২০ টাকায় নেমে আসে। তবে চলতি মাস থেকে আবার বাড়তে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামান দ্য বিজনেস পোস্টকে বলেন, গত মাসে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় অভিযান চালানো হয়েছিল। এবার ধীরে ধীরে দাম বেড়েছে। তার পরও কৃষিমন্ত্রণালয় বা প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে দাম বেধে দেয় তবে আমরা বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটা মনিটরিং করবো। অন্যথায় অভিযান করে বা মনিটরিং করে তো লাভ নেই। এছাড়া একটি পণ্য নিয়েই যদি আমরা পড়ে থাকি তবে অন্যপণ্যগুলোর কী হবে। তারপরও ডিমের বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি।
ডিমের দাম কারসাজির অভিযোগে কাজী ফার্ম, প্যরাগণ পোল্ট্রি লি. ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রতিযোগীতা কমিশন। সোমবার ও মঙ্গলবার এই মামলাগুলোর শুনানি হবে।
তবে এবার দাম বৃদ্ধিকে যৌক্তিক বলছেন পোল্ট্রি শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, এক দিকে ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে ডিমের উৎপাদন কমেছে। ফলে ডিমের দাম স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে। ডিমের দাম কমাতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে, এতে উৎপাদনও বাড়বে। এছাড়া পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিল্পমালিকরা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের (বিপিকেআরজেপি) পক্ষ থেকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল হক বেগের তৈরি উৎপাদন খরচের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ১১ পয়সা। সে হিসেবে খুচরা পর্যন্ত প্রফিট মার্জিন ১ টাকা ৩৯ পয়সা। এই প্রফিট খামারি, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এই তিন পক্ষের মধ্যে ভাগ হয়।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনে কীভাবে আরও সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যায় সেই চেষ্টা করছি আমরা। আমরা সকলেই এখন একটি সংকটের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। কাঁচামালের দাম কমলে, ডলারের দর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
বিপিকেআরজেপি’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিন সম্প্রতি বলেন, খামার পর্যায়ে উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম হওয়ায় পুঁজি হারাতে প্রতিনিয়তই খামারি ঝড়ছে। আমাদের হিসাব বলে বর্তমানে দেশে ৭৯-৮১ হাজার লেয়ার ব্রয়লার খামার রয়েছে। যা চলতি বছরের শুরুতেও ৮৮-৮৯ হাজারটি ছিল। এখনও খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন উৎপাদন খরচের নিচে। ডিমের দাম কমাতে হলে উৎপদন খরচ কমাতে হবে। এবং উৎপাদন বাড়াতে হবে।
ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর বর্তমান সাবেক সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, বর্তমানে ডিমের দাম যৌক্তিক ভাবেই বাড়ছে। ডিম বা মুরগির দাম কমাতে হলে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। বর্তমানে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১ টাকার আশপাশে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণ পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের উপকরণগুলোর আমদানি খরচ বেশি। ডলারের দাম ও শুল্ক কামালে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ কমবে।