প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ইউরোপে ওমিক্রন শনাক্ত, উদ্বেগে পোশাক রপ্তানিকারকরা

০১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৩১:২৮ | আপডেট: ৩ years আগে
ইউরোপে ওমিক্রন শনাক্ত, উদ্বেগে পোশাক রপ্তানিকারকরা

আরিফুর রহমান তুহিন

ইউরোপে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত এবং তা নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ- ফের উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে সবেমাত্র করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের।

ওমিক্রন সংক্রমিত ব্যক্তি এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে শনাক্ত হয়েছে। নতুন এ ধরনটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই প্রেক্ষিতে অনেক দেশই ফের বিধিনিষেধ আরোপ করছে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে, নেদারল্যান্ডস ৩ সপ্তাহের শাটডাউন ঘোষণা করেছে। স্লোভাকিয়া এবং অস্ট্রিয়া লকডাউন এবং বেলজিয়াম সেমি-লকডাউন আরোপ করেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়া এবং ২০২০ সালের মতোই আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কায় ইউরোপীয় ক্রেতারা এখন দেশের উৎপাদকদের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন ধীরে ধীরে করতে বলেছে।

উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে যত তারাতারি সম্ভব, শ্রমিকদের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, রপ্তানি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আসে। যার মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইডেন, পোল্যান্ড এবং ডেনমার্ক প্রধান উৎস।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুসারে, শনিবার যুক্তরাজ্যে ৩৯ হাজার ৫৯৭ জনের করোনা শনাক্ত এবং মারা গেছেন ১৩১ জন। পোল্যান্ডে ২৬ হাজার ১৮০ জন শনাক্ত, মৃত্যু হয়েছে ৩৭৮ জনের। ফ্রান্সে ৩৭ হাজার ২১৮ জন শনাক্ত এবং ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ৪৯ হাজার ৩১১ শনাক্ত এবং ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতালিতে ১২ হাজার ৮৭৭ শনাক্ত এবং ৯০ জন মারা গেছে আর বেলজিয়ামে ২১ হাজার ৭৭২ জন শনাক্ত এবং ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।

যদিও এর আগের সবশেষ করোনার বৃদ্ধি রপ্তানি বা কাজের আদেশকে প্রভাবিত করেনি। এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তারা আশঙ্কা করছেন ইউরোপে ভাইরাস সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে শিপমেন্ট বিলম্ব এবং কাজের আদেশ কমাতে পারে।

তারা বলেছেন, ক্রেতারা তাদের সতর্ক করেছেন যে, নতুন সংক্রমণের কারণে তারা চালান বিলম্বের অনুমতি দিতে বাধ্য এবং যদি তা ঘটে তবে, রপ্তানিকারকরা আবারও আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হবে।

বর্তমানে, চালান বিলম্ব বা অর্ডার স্থগিত করার কোন খবর নেই। বিপরীতে, তৈরি পোশাক খাতে নতুন অর্ডারের হার বেশ ভালো। তবে, ইউরোপের নতুন ভাইরাস সংকট ইতিমধ্যে পাট পণ্য খাতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

তুলিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, গত এপ্রিল থেকে তাদের রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ কমেছে। তিনি এর জন্য করোনা পরিস্থিতিকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ইশরাত বলেন, বিশেষ করে আমরা যারা বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানি করি, ইউরোপ আমাদের প্রধান রপ্তানিস্থল। ক্রেতারা গত মাস থেকে অর্ডার দিতে শুরু করেছেন। কিন্তু নতুন লকডাউন আমাদের চাপে ফেলেছে। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

তিনি বলেন, ক্রেতারা ইতোমধ্যে আমাকে সতর্ক করেছেন যে, যদি সংক্রমণ এবং প্রাণহানি বেড়ে যায়; তবে তারা নতুন অর্ডার বিলম্বিত করবে। যদি তা হয়, তাহলে আমরা আমাদের কারখানাগুলো কীভাবে চালাবো?

পোশাক রপ্তানিকারকরা দাবি করেছেন, যদিও কোনও অর্ডার স্থগিত করা হয়নি, তবুও তারা ইউরোপে নতুন ধরনটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে চিন্তিত।

নিপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. খসরু চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় বাজার এপ্রিল থেকে পুনরায় চালু হয়েছে, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কাজের আদেশ রয়েছে, কিন্তু লকডাউন থাকলে ক্রেতারা শিপমেন্টে বিলম্ব করবে।

বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, যদিও নতুন লকডাউন অতীতের মতো আমাদের প্রভাবিত করবে না, তবে এটি আমাদের রপ্তানি আয়কে প্রভাবিত করতে পারে। কিছু দিন আগে, ক্রেতারা আমাদের দ্রুত চালানের জন্য চাপ দিয়েছিল, কিন্তু এখন তারা আমাদেরকে ধীরে ধীরে করতে বলছেন, যা নির্দেশ করে যে, তারা নতুন ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত।

তিনি পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে বলেন, ইউরোপে টিকাদানের পরিমাণ খুবই ভালো।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, তারা ইউরোপ ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই উদ্বিগ্ন। তিনি স্মরণ করেন, কীভাবে সরকার ভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউন জারি করেছিল, কারখানাগুলোকে কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করেছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি এবং একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি কিন্তু আমরা আমাদের কর্মীদের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে পারছি না।

ফারুক হাসান বলেন, যদি করোনার নতুন ধরনটি বাংলাদেশে আঘাত হানে এবং সরকার লকডাউন আরোপ করে, তাহলে আমরাই প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত হবো, কারণ আমরাই সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক।