রাজধানীতে থাকে অথচ মামা হালিম চেনে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাজধানীর কলাবাগানে গেলেই চোখে পড়ে সুস্বাদু মুখরোচক মামা হালিমের ছোট্ট একটি দোকান। যার পথচলা শুরু আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এত বছর পরও জিভে জল আনা মুখরোচক এই মামা হালিম ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য। আর তাই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন বিলাসীরা ছুটে আসেন এই হালিমের স্বাদ নিতে।
৫০ বছর আগে এর যাত্রা শুরু হলেও প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাড়ির খাবার টেবিলে অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে এই হালিম। প্রতি বছর রমজানে এর চাহিদা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। ইফতারে অনেকের মামা হালিম না হলে যেনো চলেই না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কলাবাগানের ছোট্ট দোকানটিতে এক বাটি হালিমের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে ভোজনবিলাসীদের।
দোকানটির সত্ত্বাধিকারী মামা জানান; একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি একটি বিহারী রেস্তোরাঁয় বয় হিসেবে কাজ করতেন, যেখানে তিনি বিহারি বাবুর্চিদের কাছ থেকে মসুরের ডাল আর মাংস দিয়ে একটি বিশেষ মুখরোচক খাবার রান্না শিখেছিলেন।
আর এ হালিম এখন এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে; সারা শহর থেকে মানুষ ছোট দোকানটিতে এসে এক বাটি হালিমের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে।
তিনি বলেন; “মসুরের ডাল এবং মাংসের এই সংমিশ্রণ বিহারীদের কাছে ডাল গোস্ত নামে পরিচিত ছিল। আমাদের স্বাধীনতার তিন মাস পর, আমি আমার গ্রাম কুমিল্লা ছেড়ে ঢাকায় আসি। সেসময় বিহারী রেস্তোরাঁর একজন বাবুর্চি আমাকে আমার নিজের একটি দোকান খোলার পরামর্শ দেন।”
“আমি সেই ডাল-গোস্ত রেসিপি থেকে ধারণা নিয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের মশলা এবং ঘরে তৈরি সস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কাজটি শুরু করি। এরপর আমার গ্রাহকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমিও আমার অভিজ্ঞতাকে পূঁজি করে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অবশেষে একটি গোপন রেসিপি নিয়ে আসি যা এখনও পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।
মামা বলেন: “আমরা হালিমে যে সস ব্যবহার করি তা আমাদের সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ।”
এই সসে ১৫টিরও বেশি মশলা আছে, বলে জানান দোকানের ব্যবস্থাপক মোঃ রাসেল।
ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী (৩০)। মামা হালিমের নিয়মিত এই ক্রেতা দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন; মামা হালিম কয়েক দশক ধরে তার পরিবারের ইফতার মেনুতে রয়েছে।
“মামা হালিম আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অত্যন্ত পছন্দের। ইফতারে থাকতেই হবে সুস্বাদু এই হালিম। মসুর ডাল স্বাস্থ্যকর হওয়ায় সারাদিন রোজা শেষে এই হালিম শরীরে শক্তি যোগায়।
দোকানে গিয়ে দেখা যায়, রমজানের দ্বিতীয় দিনে এক বাটি হালিমের জন্য কলাবাগানের ছোট দোকানটির সামনে নওয়াজউদ্দিনসহ সারা শহর থেকে আসা বিপুল সংখ্যক ক্রেতার ভিড়।
মামা হালিমের ম্যানেজার দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, “শীত ও গ্রীষ্মের জন্য আমাদের ভিন্ন রেসিপি রয়েছে। এখন যেহেতু প্রচন্ড গরম তাই হালিম একটু ঠান্ডা হওয়া দরকার, মানে কম মশলাদার।”
রমজানের সময় আমরা আমাদের বিশেষ রেসিপিটি ব্যবহার করি যাতে রোজাদাররা সঠিক পুষ্টি এবং সতেজ মশলার একটি তাজা মিশ্রণ পান, যা তাদের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং তাদের সুস্থ রাখে।"
মামা হালিমের সেলস এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন “আমাদের সস এবং আচারের বিভিন্ন মিশ্রণ রয়েছে। আমরা আমাদের এই রেসিপিতে ১৫টিরও বেশি জাতের মশলার মিশ্রণ ব্যবহার করি।”
তিনি জানান, হালিম তৈরিতে তারা ঘি, সুগন্ধি চাল, কাঁচা মরিচ, আদা, ধনে, দারুচিনি, জিরা, এলাচ, মেথি, মৌরি ও পুদিনা পাতা ব্যবহার করেন। তবে তাদের কেউ-ই গোপন রেসিপিটি বলতে রাজি হননি।
মামা হালিম খাসি-গরু ও মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি হয়। ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো স্বাদ ও রুচির ভিত্তিতে বেছে নিতে পারেন। হালিমের দাম নির্ভর করে বাটির আকারের ওপর। এর দাম ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২,২০০ টাকা পর্যন্ত। দোকানে মুরগির হালিমের দাম ২৫০ টাকা থেকে আর খাসির হালিমের দাম শুরু ৩০০ টাকা থেকে।