প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ইমেজ সংকটে আমানত হারাচ্ছে এনবিএফআই

২১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৪:৪৪:৩৬ | আপডেট: ৩ years আগে
ইমেজ সংকটে আমানত হারাচ্ছে এনবিএফআই

মেহেদী হাসান

ব্যাংকের তুলনায় উচ্চ সুদের প্রস্তাব দেয়ার পরও আমানত হারাতে চলেছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। কারণ, কেলেঙ্কারি আর নানা অনিয়মের কারণে ভাবমূর্তি হারিয়েছে এ খাত, যা এখন পুনরুদ্ধার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এনবিএফআইয়ের আমানত চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৪২ হাজার ৯৪১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, কিছু এনবিএফআই এখনও প্রধানত অনিয়ম এবং কেলেঙ্কারির কারণে আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না, যা সেক্টরের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

তিনি আরও বলেন, এর ফলে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এনবিএফআইএলগুলোও ব্যাংকের তুলনায় উচ্চ সুদের হার অফার করা সত্ত্বেও আমানত সংগ্রহ করতে অসুবিধায় পড়ছে, যা আমানত কমার প্রবণতার কারণ হতে পারে।

ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দেয়, যেখানে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৬ থেকে ১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে।

সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে এ খাতের আমানত ছিল ৪২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

আমানতের পরিসংখ্যান শুধুমাত্র বেসরকারি খাতে ছিল, কারণ পাবলিক এনবিএফআইগুলি নন-ডিপোজিটরি।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া দ্য বিজনেস পোস্ট’কে বলেন, ব্যাংকগুলোতে ঋণের হারের সীমা ছাড়াও, আমানতের পতন প্রবণতার পেছনে ইমেজ সংকট অন্যতম কারণ ছিল।

ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণের হার ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ভূঁইয়া ব্যাখ্যা করেন, ঋণগ্রহীতারা নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ চান। কিন্তু আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়, কারণ আমানতের ওপর আমাদের সুদ ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি।

এর ফলে বেশিরভাগ এনবিএফআই তাদের উচ্চ সুদ বহনকারী আমানত ছেড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন, এনবিএফআইগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোরাম বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) এর প্রথম সহ-সভাপতি ভূঁইয়া।

বিএলএফসিএ চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, পাঁচ থেকে ছয়টি এনবিএফআইয়ের খারাপ অবস্থার কারণে এ খাতটি ইমেজ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১০টি এনবিএফআই এ খাতে ৮০ শতাংশ নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ধারণ করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স এবং ফার্স্ট ফাইন্যান্স সহ ১০টি এনবিএফআই-এ ব্যাপক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি পায়।

বিজনেস পোস্ট’কে প্রতিবেদক সম্প্রতি পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অফিস পরিদর্শন করেছেন। এ সময় দেখা গেছে, অনেক আমানতকারী মেয়াদ পূর্ণ হবার পরে তাদের অর্থ উত্তোলনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু দিনের পর দিন ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান (চলতি দায়িত্ব) বলেন, এখন আমরা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিচ্ছি মানবিক কারণে, যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

২০১৯ সালের জুনে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে পিপলস লিজিং এবং আর্থিক পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কারণ, এটি তহবিল পরিপক্ক হওয়া সত্ত্বেও আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এ পদক্ষেপটি খাতটিকে আরও সংকটে ফেলেছে। তবে, সরকার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার পরিবর্তে পুনর্গঠন করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওইসব এনবিএফআই বড় শিল্প মালিকদের পকেট প্রতিষ্ঠান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ খাতে আরও কিছু নিয়ম-কানুন চালু করা দরকার।

এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।