প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

ঈদ ও পহেলা বৈশাখ ঘিরে ই-কমার্সে সুবাতাস

০৭ এপ্রিল ২০২২ ১৩:৩২:৫৮ | আপডেট: ৩ years আগে
ঈদ ও পহেলা বৈশাখ ঘিরে ই-কমার্সে সুবাতাস

শামীম আহমেদ

ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে অনলাইনে কেনাকাটার ধরাবাহিকতা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বাড়ায় এ প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুই উৎসবের আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মূল্যছাড়ে পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাদের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান, বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে এবং পণ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রেও তৎপরতা বাড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

দারাজ, ফুডপান্ডা, আজকেরডিল, চালডাল, পিকাবো, বাগডুম, ক্লিক বিডি, অথোবা, প্রিয়শপসহ এ ধরনের বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক পেজে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মূলছাড় দিয়ে ক্রেতার মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিক্রির পাশাপাশি পণ্য পৌঁছে দেয়ার নামে গ্রাহকদেরকে নিজেদের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, দেশে অনলাইন কেনাকাটা করোনার সময় জনপ্রিয় হয়েছে। এই চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে লেনদেনেরে প্রক্রিয়াগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি ব্যবসার পরিধিও বাড়ানোর চেষ্ঠা করতেছে ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেন, রমজানের শুরু থেকেই জামাকাপড় এবং জুতা, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং মোবাইলফোন, ঘরের আসবাবপত্র, গয়না, প্রসাধনী, ঘরের ভেতর এবং ছাদ সাজানোর মতো পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে সাধারণ বিক্রেতারা মাসের শেষ সপ্তাহের জন্য অপেক্ষা করেন।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, সাধারণত দিনে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার অর্ডার পাওয়া যায়। কিন্তু রমজান শুরুর সাথে সাথে এ সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজারে চলে যায়।

দেশের শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম-এর প্রধান অপারেটিং অফিসার মিরাজুল হক জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ৫০ শতাংশ বেশি অর্ডার পাওয়ার দাবী করেন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৩ হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৬৮৩টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও প্রায় আড়াই লাখ ফেসবুক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো এফ-কমার্স নামেও পরিচিত।

ই-ক্যাবের মহা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, সাধারণত রমজানের শুরু থেকে অনলাইনে বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ে। তবে এবার মাসের শুরু থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ বা তার বেশি বিক্রি হবে। ঈদ পর্যন্ত এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সরকারী হিসেবে দেশের ই-কমার্স বাজারের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে সামগ্রিকভাবে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে যা প্রায় ৩০ হাজর কোটি টাকা।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকেরডিল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, অনলাইনে বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দেড় থেকে ২ গুণ বেশি হচ্ছে। আশা করছি, রমযানের প্রথম তিন সাপ্তাহে এটি আরও বাড়বে। পণ্য পৌঁছাতে সমস্যা থাকায় মাসের শেষ সপ্তাহে বিক্রি কম হবে। তাই আগাম এই দুই উৎসবকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পোষাক, ঘরের আসবাবপত্র এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের উপর ছাড় দেয়াসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পোষাকের ক্ষেত্রে আমাদের ওয়েবসাইটের তুলনায় ফেসবুক পেজ থেকে বেশি অর্ডার পাচ্ছি। এখানের গ্রাহকদের বড় অংশ নারী, যারা ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য কিনতে পছন্দ করেন। এদিকে আমাদের ফেসবুক ব্যবসায়ীরা সারা দেশে পণ্য পাঠাচ্ছে। যেহেতু ফেসবুকের গ্রাহকরা ক্যাশ অন ডেলিভারি করতে পছন্দ করেন, তাই ব্যবসায়ীদের পণ্যের মূল্য হাতে পেতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।

তার ভাষ্যমতে, দেশে ই-কমার্স সম্পর্কিত কিছু নেতিবাচক ঘটনার পরেও আবার কেনাকাটার প্রবণতা ফিরে এসেছে। তাই আমরা এটিকে উৎসব মনে করেছি। এই উৎসবে অনেক নতুন গ্রাহককে কেনাকাটা করতে দেখছি। এই প্রবণতা শুধু শহরেই নয়, জেলা শহরগুলোতেও দেখা গেছে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ী সাজ্জাদ বলেন, রমযানের এই সময়ের মধ্যে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ করার দিকে নজর দেব। গ্রহাকের চহিদা অনুযায়ী পোষাকের ওপর বেশি নজর দেই। এছাড়াও আমরা পেমেন্ট পদ্ধতিতে নগদের মাধ্যমে ২০ শতাংশ তাত্ক্ষণিক ব্যাক অফার দিয়ে থাকি। যাতে গ্রাহকরা তাদের দৈনন্দিন পণ্যগুরো সবোর্চ্চ সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারে।

এবারের রমজানে ৩ গুণ বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। পোষাক এবং গ্যাজেট পণ্যের উপর ভিত্তি করে এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ই-ব্যবসায়ীরা।

তারা আরও বলেন, উষ্ণ আবহাওয়া, রাস্তায় ধুলোবালি, পরিবহন খরচ বাড়া এবং যানজটের কারণে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। গ্রাহকরা অনলাইনে পণ্য কিনতে ভালোবাসেন এবং এটি উপভোগও করেন।

বাজার ও ভোক্তা পরিসংখ্যানের মতে, ২০২২ সালের শেষে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ফলে দেশের ই-কমার্স আয় ৮ হাজার ৩০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।