প্রচ্ছদ ›› বাণিজ্য

‘উন্নয়নশীল বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারও উপেক্ষিত’

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ জুন ২০২৩ ১৮:০১:১১ | আপডেট: ১০ মাস আগে
‘উন্নয়নশীল বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারও উপেক্ষিত’

উন্নয়নশীল বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারও উপেক্ষিত মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন চালকে পুঁজিবাজার এখনো স্থান নিতে পারেনি। কিন্তু পুঁজিবাজার চালকের নেতৃত্বে আসতে পারে। আমরা সে পথেই রয়েছি। এখানে আমাদের আরেকটু নজরদারি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম-সিএমজেএফ এবং বালাংদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত বাজেট বিষয়ক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকার পল্টনের নিজস্ব কার্যালয়ে রোববার বেলা ১১টায় ‘‘ডিসকাশন অন বাজেট ২০২৩-২৪; ক্যাপিটাল মার্কেট পারসপেক্টিভস’ শীর্ষক ওই আলোচনার সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ।

এসময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কেবল ব্যাংক নির্ভরতা নিয়ে অর্থনীতি পুরোপুরি সাবলম্বী হওয়া সম্ভব না। পুঁজিবাজারই হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। আমরা আগামী বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিলাম। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কেম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। এটা করলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে।

তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন আগে ১০টি কোম্পানি নিয়ে একটা সার্ভে করেছিলাম। সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পনির চেয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকেই তুলনামূলভাবে সরকারের রাজস্ব বেশি এসেছে। এজন্য কর কমিয়ে হলেও কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’রোজারিও বলেন, দেশের সব ছোট ছোট বিনিয়োগগুলোকে একটি ফ্রেমে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হতে পারে পুঁজিবাজার। এমন একটি পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটের জন্য আমরা নতুন কিছুই পেলাম না। এটা খুবই হতাশাজনক।

তিনি বলেন, বাহিরের দেশগুলোতে যেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানির মূল্যায়ন বাড়ে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশের কেম্পানিগুলো এখানে তালিকাভূক্ত হওয়াকে বোঝা মনে করছে। আমাদের এ অবস্থানটা ঠিক করতে হলে সরকারকে কিছুটা প্রণোদনা দিতে হবে।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছুই রাখা হয়নি জানিয়ে চট্ট্রগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ (সিএসই) এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙেগ তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান বৃদ্ধি, এক্সপোজার সীমার বাইরে বন্ড ও সকল ফান্ডকে রাখার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তার কোনো প্রতিশ্রতি নেই বাজেটে।

অন্যদিকে বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব না। এটি একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে হয়ে থাকে জানিয়ে সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘‘বাজেটে যখন পুঁজিবাজারের উপস্থিতি থাকে না, তখন বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বার্তা যায়-সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে না। আমরা আশা করবো প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় পুঁজিবাজার স্থান পাবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা যেখানে বলছি, স্মার্ট বাংলাদেশ অভিযাত্রার দিকে যাত্রা শুরু করেছি। সেখানে প্রথাগত আর্থিক খাতকে অর্থায়নের উৎস হিসেবে ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না।’’

পৃথিবীর অনেক দেশই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পুঁজিবাজার।

মন্ত্রী বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের উন্নয়নে প্রয়োজন অর্থের। পুঁজিবাজার সেই অর্থায়নের উৎস হতে পারে। আমরা সেদিকে যাবো, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আমাদের অভিযাত্রা শুরু হবে।

তিনি বলেন, ‘কৈশরে উপনীতদের যেমন বিশেষ যত্ন নিতে হয়, তেমনি আমাদের বিকাশমান অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারকে চালকের আসনে নিয়ে যেতে যত্ন নিতে হবে। এখানে একটু নজরদারি-তদারকি করা লাগবে।’’

দেশের অর্থনীতির আগের বেশি তথ্য নির্ভর ও জ্ঞাণ নির্ভর হচ্ছে। এখন বিজনেস সংগঠনগুলোও আগের চেয়ে বেশি দক্ষ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘সর্বক্ষেত্রে সংস্কার করা দরকার তবে আর্থিক খাত হিসেবে ব্যাংক ও এনবিআর এ সংস্কার খুবই জরুরি। আমরা সেখানেও কাজ করবো।’’

ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম-সিএমজেএফ আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় এ কথা বলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
‘উন্নয়নশীল দেশে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত থাকে। এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়টি সেভাবে না আসলেও আমি বাজেটে আনার জন্য লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়কে জানাবো।’’

তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ব্যবধান আরো বৃদ্ধি করা যেতে পারে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে।

বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হারের পার্থক্য ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ট্যোবাকো ইত্যাদি খাত এর আওতার বাহিরে।