মাসের দুই তৃতীয়াংশ কেটে গেলেও অনেক জেলা-উপজেলায় শুরুই হয়নি ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) ভর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রি।
প্রকৃত ভোক্তাদের কাছে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ না করা, ডিসি অফিস ও টিসিবির মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কাউন্সিল অফিস বা ইউনিয়ন পরিষদের অসহযোগীতাসহ নানা সমস্যা ও জটিলতায় পণ্য বিক্রি আটকে আছে। অনেক এলাকায় শুরু হলেও নির্ধারিত কার্ডধারী না আসায় বিক্রির গতি খুবই কম। ফলে পণ্য পরে থাকছে ডিলারের গুদামে।
এছাড়া কেজিপ্রতি কমিশন ১ টাকা কমিয়ে দেয়া ও পরিচালন ব্যয়ের উপর কর হার বাড়িয়ে দেয়ায় পণ্য বিক্রিতে পরিচালন ব্যয় বেড়েছে ডিলারদের। তার উপর সঠিক সময়ে পণ্য বিক্রি করতে না পারায় সেই খরচ আরও বাড়ছে। এতে পণ্য বিক্রির শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর উত্তর-৮ নং ওয়ার্ডের কার্ডের সংখ্যা আট হাজারের বেশি। এর মধ্যে গত ২০ দিনে মাত্র তিন হাজার লোকের পণ্য উত্তোলন করেছেন ডিলাররা। তবে সেই তিন হাজার কার্ডধারীরর পণ্যও বিক্রি শেষ হয়নি এখনও। ঢাকার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, ভোক্তাদের কাছে কার্ড বিলি না করে কাউন্সিলের লোকের হাতে প্রায় পাঁচ হাজার কার্ড রয়ে গেছে। তারা একত্রে পণ্য উঠানোর জন্য অফার করে ডিলারদেরকে। কোনো ডিলার রাজি না হওয়ায় কার্ড দিয়ে পণ্য উত্তোলন করছে না কেউ। এতে পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছে কার্ড থাকলে তো পণ্য বিক্রি কার্যক্রম ব্যাহত হত না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি সত্য, আমি অনুসন্ধ্যান করেছি। আমি চেষ্টা করছি কাউন্সিলরকে চাপ দিয়ে কার্ডগুলো বিলি করার। ওই এলাকায় পণ্য বিতরণকারী হাই এন্ড হেনা এন্টারপ্রাইজ ও রানা এন্টারপ্রাইজ অন্য এলাকার ডিলার। তাই তারা বেশি সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, শুধু উত্তরাতেই নয়, জানা যায় এমন সমস্যা রাজধানীর অনেক ওয়ার্ডেই হচ্ছে। গত মাসে পণ্য বিক্রির সময় শেষ হলেও ৭-৮টি ওয়ার্ডের পণ্য বিক্রি শেষ করতে পারেননি ডিলারা। কাউন্সিল অফিসের অসহযোগীতায় এমন বার বার এমন সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীসহ অনেক জেলা-উপজেলায় পণ্য বিক্রি শুরু হয়নি। নরসিংদীতে আজ বুধবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা নিশ্চিত নয়।
নারায়ণগঞ্জের দাপা গুদাম কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, ডিসি অফিসের সঙ্গে সমন্বয়হীনতায় পণ্য বিক্রি শুরু হচ্ছে না। ডিসি অফিস চাইলে পণ্য বিতরণ করবে তারা। কিন্তু তারা তার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। তাই পণ্যও বুঝে নিতে পারছে না। এছাড়া ডিলারদের ব্যাংক জমা ও পণ্য বিক্রির চালান রশিদ ও সরবরাহ আদেশ (ডিও) কে ইস্যু করবে, জেলা অফিস? নাকি টিসিবি অফিস? তা নিয়েও জটিলতা ছিল। তবে মঙ্গলবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সবকিছুই জেলা অফিস তদারকি করবে। টিসিবি থেকে তারা পণ্য বুঝে নিয়ে টিসিবির গুদামেই আলাদা করে রেখে দিবে।
ডিলারদের সূত্রে জানা যায়, জুলাই মাস পর্যন্ত টিসিবি ডিলারদেরকে পরিচালন ব্যয় বাবদ প্রতিকেজিতে ৫ টাকা (৫০ কিলোমিটারের ভিতর) দিত, কিন্তু গত আগস্ট মাস থেকে ১ টাকা কমিয়ে ৪ টাকা দিচ্ছে। বিপরীতে ডিলারা সরকারের ঘরে ক্রয় মূল্যের ৭ শতাংশের ৫ শতাংশ হারে কর দিত। তবে আগস্ট মাস থেকে কর বাড়িয়ে পরিচালন ব্যয়ের উপর ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে রাজস্ব বোর্ড। এতে ডিলারদেরকে ৪৮ শতাংশ কর বেশি দিতে হবে। এক দিকে পরিচালন ব্যয় কমেছে অন্য দিকে কর বেড়েছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পর পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। সবমিলিয়ে ডিলারদের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর একজন ডিলার বলেন, নারায়ণগঞ্জের গুদাম থেকে পণ্য নিয়ে বিক্রিতে এমনিতেই আমাদের খরচ অনেক বেশি। তার উপর পরিচালন ব্যয় কমেছে, কর ও পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। তার উপর নানান জায়গায় বাধ্যতামূলক বকশিষ দিতে হয়। এসব দিয়ে পণ্য বিক্রিতে অনেক ডিলারের আগ্রহ কমে গেছে। লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে ব্যবসা করতে হচ্ছে।