হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের উন্নয়নে বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা।
সোমবার বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) এসএমই ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির অষ্টম
বৈঠকে কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন শিল্প সচিব।
শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কমিটির বেসরকারি খাতের কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিটাগং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম।
হালকা প্রকৌশল শিল্পকে একটি উচ্চ সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৩ শতাংশ। শিল্প মন্ত্রণালয়কে এ খাতে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের স্থানীয় বাজারের আকার বর্তমানে ১২ বিলিয়ন ডলার। এ খাতের উন্নয়নে আমরা অব্যাহতভাবে সহায়তা প্রদান করে যাব। এই খাতের জন্য বিসিক অঞ্চলে পৃথক শিল্প পার্ক স্থাপন করা হবে এবং বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করা হবে।
বিল্ডের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রস্তাবনামূহের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে এ খাতের প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে এবং তাদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করতে হবে। আমাদের এই মুহূর্তে কাজ হলো, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা স্থির করা যা কিনা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতকে সবুজায়ন করা আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।
বিল্ডের চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবনাসমূহের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী এরই মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে আমরা কাজ করছি।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম ‘অ্যানালাইসি অফ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০২২’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। তিনি ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০২২’ প্রণয়ণে ভূমিকা রাখায় শিল্প মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ, হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের জন্য মেড ইন বাংলাদেশ প্রচারণা, ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে হালকা প্রকৌশল শিল্প নীতিমালাকে আরো উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।
বিল্ডের সিইও হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের জন্য বিশেষায়িত শিল্প পার্ক, শিল্প ক্লাস্টার, ই-কমার্স প্লাটফর্ম, রি-স্কিলিং ও আপস্কিলিংয়ের দাবি জানান। এছাড়া এ খাতের উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে তিনি একটি বছরভিত্তিক উৎপাদন ও রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব জানান। তিনি জানান, বিল্ড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং রোডম্যাপে ২০৩০ সাল নাগাদ রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ১২.৫৬ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা এবং সহায়ক অর্থায়ন প্রয়োজন হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান জানান, এসএমই ফাউন্ডেশন বর্তমানে একটি ক্লাস্টার উন্নয়ন নির্দেশিকা নিয়ে কাজ করছে, যা কিনা হালকা প্রকৌশল শিল্প
খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক হবে। তিনি এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য কাঁচামাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানিতে কর সংক্রান্ত বিষয়াদির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির প্রেসিডেন্ট মির্জা নুরুল গনি শোভন হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের উপখাত সমূহ শণাক্ত করার দাবি জানান এবং প্রতিটি খাতের জন্য যথাযথ প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে একটি সাধারণ প্লাটফর্ম তৈরির সুপারিশ করেন।
উইম্যান অন্ট্রাপ্রেনিউরস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর পর নারী উদ্যোক্তারা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে আর্থিক সহায়তা পায়নি। নারী উদ্যোক্তারা বর্তমানে ব্যাপক মাত্রায় আর্থিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, প্রণোদনা সহায়তার অপ্রাপ্তি এ ক্ষতিকে আরো বেশি ঘণীভূত করবে।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আবদুল আলিম বলেন, আমাদের দ্রুততম সময়ে সাবকন্ট্রাক্টিং অ্যাক্ট প্রয়োজন। এছাড়া এ খাতের স্বার্থ রক্ষায় সাশ্রয়ী মূল্যে শিল্প প্লট বরাদ্দ প্রয়োজন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন, এসএমই ফাউন্ডেশন, বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউনিডো, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ।