ইব্রাহিম খলিল মামুন
কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন বালু জমে থাকা স্থানে কোটি কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ইলমেনাইট, জিরকন, রুটিল, ম্যাগনেটাইট, লিউকক্সিন, কিয়ানাইট, গারনেট এবং মোনাজাইটের মতো মূল্যবান খনিজগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের (বিএইসি) মতে, খনিজ বালি থাকা ১৭টি এলাকা মোট ২৩ শতাংশ ভারি খনিজ ধারণ করে, যার পরিমাণ ৪.২৩ মিলিয়ন টন বলে এরইমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের উদাসীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে গত ৫৩ বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর এ খনিজ সম্পদগুলো নষ্ট হচ্ছে এবং সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সংগঠনের সদস্য-সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, নিষ্কাশন প্রকল্পে অস্ট্রেলিয়ান, সিঙ্গাপুরের কোম্পানির অংশগ্রহণকে অনুমোদনের দিকে সরকারের ঝোঁক দেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ফলপ্রসূ হবে না।
সূত্র মতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পাকিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ প্রথম ১৯৬৮ সালে সৈকতের বালিতে তেজস্ক্রিয় খনিজগুলোর উপস্থিতি শনাক্ত করেছিল।
স্বাধীনতার পর, নবগঠিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ১৯৭৫ সালে কক্সবাজারে একটি পাইলট প্লান্ট স্থাপন করে। তারা সৈকত থেকে বালু সংগ্রহ শুরু করে এবং তাদের উপর মূল্যবান খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব খুঁজে পায়।
যার উপর কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় সৈকত বালু খনিজ শোষণ কেন্দ্র নামে একটি বালু উত্তোলন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তারা দেশের দীর্ঘতম উপকূলরেখা সমুদ্র সৈকত বালিতে প্রচুর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে।
বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের (বিএইসি) এর মতে, খনিজ বালির মধ্যে মোনাজাইট তেজস্ক্রিয় খনিজ। অবশ্য মোনাজাইটের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এখন তা ক্ষতিকর নয়। মোনাজাইট ছাড়াও আরও বেশ কিছু খনিজ পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে।
ইলমেনাইট নামের অর্থনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ পাওয়া গেছে। যা টাইটানিয়াম ধাতুর একটি খনিজ, এতে কিছু আয়রনও আছে। জিরকোন নামের আরেকটি খনিজের সন্ধানও পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। যা জিরকোনিয়াম ধাতুর খনিজ। এবং রুটাইলও পাওয়া গেছে। যেটি টাইটানিয়াম ধাতুর খনিজ।
বিএইসি কর্মকর্তারা ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৬ সালে উপকূলীয় অঞ্চল জরিপ করে ১৭টি খনিজ সমৃদ্ধ জাগয়া আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় ১৫টি, নিঝুম দ্বীপে ১টি এবং পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ১টি রয়েছে।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে বিএইসি অস্ট্রেলিয়ান প্রযুক্তিগত সহায়তায় একটি পাইলট প্ল্যান্ট স্থাপন করে। যা ৪০০ টন ভারী খনিজ, বিশেষ করে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটিল আলাদা করে।
বিএইসির সদস্য মাহমুদুল হাসান দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, বাংলাদেশ তার উপলব্ধ সম্পদ দিয়ে সমুদ্র সৈকত থেকে এসব খনিজ উত্তোলন করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রকল্পের যে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন তা সংগ্রহ করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, কক্সবাজার উপকূলরেখা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য আমাদের বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে হবে।
এলাকা পরিদর্শন করে, ২৫টিরও বেশি আবাসিক হোটেল, পাঁচটি রেস্তোরাঁ এবং শত শত আবাসিক বাড়ি পাওয়া গেছে কাতাতলী থেকে নাজিরারটেক উপকূলরেখার ১৫টি স্থানে।
লাবনী পয়েন্টে একটি ডিপোজিট সাইটে নির্মিত আবাসিক হোটেল কল্লোলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হক দ্য বিজনেস পোস্ট'কে জানান, তার ধারণা ছিল না যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সমৃদ্ধ স্থানে তিনি হোটেল নির্মাণ করছেন।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের কেউ আমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করেনি।
তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য-সচিব আনু মুহাম্মদ দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, সরকার এ অমূল্য খনিজগুলোর গুরুত্ব স্বীকার করতে এবং এসব উত্তোলনে অবকাঠামো নির্মাণ, সফল ও টেকসইভাবে এসব উত্তেলন ও বাজারজাত করণে খুব একটা আগ্রহী নয়। এটি করা হলে দেশের কল্যাণ হতো।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, তহবিল বৃদ্ধি করতে হবে এবং দেশীয়ভাবে এগুলো উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, উত্তোলন প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রথমে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, আবাসিক অবকাঠামোর অপরিকল্পিত স্থাপনা যা সমগ্র উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর তা এখনই বন্ধ করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) মাসুদ ইকবাল মোহাম্মদ শামীম দ্য বিজনেস পোস্ট'কে বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের নতুন কোনো পরিকল্পনা বা উদ্যোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, যদি আমরা প্রকল্পের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব পাই, তাহলে আমরা অবশ্যই এটি পরীক্ষা করে চিন্তা করবো। এমনকি যদি বিদ্যমান আইনের সংশোধন প্রয়োজন হয়, আমরা এটি বিবেচনা করবো।